
উন্নত প্রযুক্তির এই যুগেও পুরোনো পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগরে ফিশিং করছেন উপকূলের জেলেরা। পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে মাছ শিকার করে দেশের সুনীল অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন। উন্নত প্রযুক্তির অভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জেলেদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের মৎস্য শিকারিরা। যার ফলে দিনদিন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যবসা ছাড়ছেন অনেকে। সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ একটি সামুদ্রিক অর্থনীতি নির্ভর দেশ। বঙ্গোপসাগর উপকূলে লক্ষাধিক জেলে পরিবার মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে যুগের পরিবর্তনে মাছ ধরার ধরনেও এসেছে নানা বৈচিত্র্য। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বজুড়ে মাছ ধরার শিল্পে বিপ্লব এনেছে। অনেক দেশ আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে মাছ ধরার উপাদান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে সুনীল অর্থনীতি। পৃথিবীর বিভিন্ন উপকূলীয় দেশ ও দ্বীপের সরকারগুলো সুনীল অর্থনীতিকে এক নতুন দিগন্ত হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। একইভাবে বাংলাদেশেও এই সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর মতো সক্ষমতা অর্জন ও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
এফবি আবির ট্রলারের জেলে ওসমান গনি বলেন, আমরা প্রযুক্তির অভাবে সমুদ্র থেকে বেশি মাছ শিকার করতে পারি না। ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশি পরিমাণে মাছ ধরছেন। মৎস্য ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান মামুন বলেন, আমাদের জেলেরা এখনো সনাতন পদ্ধতিতে মাছ শিকার করছেন। বিদেশে জেলেরা যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন, আমাদের জেলেরা সে সুযোগ পেলে মৎস্য শিল্পে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হতো।
সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ আছে। এরমধ্যে মাত্র ৩৩ থেকে ৪০ প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভাবে ধরা হয়। যার পরিমাণ ৬.৭ লাখ টন। অথচ উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতি কাজে লাগালে সমুদ্র থেকে প্রায় ৮০ লাখ টন মাছ ধরা সম্ভব।
পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা যেখানে জিপিএস, সোনার, রাডার, নেভিগেশন চার্ট, ইকো সাউন্ডার, ফিস ফাইন্ডার, মেরিন ডেটা ব্যাংকের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলেরা এখনও প্রথাগত কাঠের নৌকা ও ম্যানুয়াল জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন। দেশের জেলেরা এসব প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ফলে মাছ ধরতে বেশি সময় লাগে, উৎপাদন কম হয় আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমারের আধুনিক প্রযুক্তির সম্পন্ন নৌযানগুলো বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় ঢুকে মাছ আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব বহিরাগতদের কাছে বাংলাদেশের জেলেরা অসহায় পড়েছে। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ আহরণকারীদের প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর আহরণকারীরা।
ফিশিং ট্রলার মালিক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ট্রলারে সমুদ্রের জাল ফেলানো ও তোলার জন্য উন্নত প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হলে দ্রুত জাল টেনে ছেলেরা নিরাপদে ফিরে আসতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে জাল কেটে দিয়ে তারা কূলে ফিরে আসে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকারে থাকা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমায় ৩৭৩ প্রজাতির মাছ আছে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৩০ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ, বিক্রি ও বিপণন হয়। আহরণযোগ্য বিশাল মৎস্য সম্পদ অধরাই রয়ে যাচ্ছে। ফলে সুনীল অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির স্বপ্ন অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়ৎদার আব্দুর রহিম খান বলেন, মৎস্য শিল্পের বিপ্লব ঘটাতে হলে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে জেলেদের। এতে জেলেরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে পারবে।
পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেদের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের জেলেরা এমন প্রত্যাশা মৎস্য সংশ্লিষ্টদের। এফবি তামান্না ট্রলারের মাঝি ইউনুস মিয়া বলেন, ভারত ও মায়ানমারের জেলেরা জিপিএস ও সোনার ব্যবহার করে সমুদ্রের মাছের অবস্থান নিশিত হয়ে জাল ফেলে। তাই তারা মাছ বেশি পায়। আর আমরা ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস করে জাল ফেলি।
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ ধরার পরিকল্পনা রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরের। তবে অপরিকল্পিতভাবে ও মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
বাংলাদেশ একটি সামুদ্রিক অর্থনীতি নির্ভর দেশ। বঙ্গোপসাগর উপকূলে লক্ষাধিক জেলে পরিবার মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে যুগের পরিবর্তনে মাছ ধরার ধরনেও এসেছে নানা বৈচিত্র্য। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বজুড়ে মাছ ধরার শিল্পে বিপ্লব এনেছে। অনেক দেশ আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে মাছ ধরার উপাদান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে সুনীল অর্থনীতি। পৃথিবীর বিভিন্ন উপকূলীয় দেশ ও দ্বীপের সরকারগুলো সুনীল অর্থনীতিকে এক নতুন দিগন্ত হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। একইভাবে বাংলাদেশেও এই সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর মতো সক্ষমতা অর্জন ও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
এফবি আবির ট্রলারের জেলে ওসমান গনি বলেন, আমরা প্রযুক্তির অভাবে সমুদ্র থেকে বেশি মাছ শিকার করতে পারি না। ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশি পরিমাণে মাছ ধরছেন। মৎস্য ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান মামুন বলেন, আমাদের জেলেরা এখনো সনাতন পদ্ধতিতে মাছ শিকার করছেন। বিদেশে জেলেরা যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন, আমাদের জেলেরা সে সুযোগ পেলে মৎস্য শিল্পে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হতো।
সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ আছে। এরমধ্যে মাত্র ৩৩ থেকে ৪০ প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভাবে ধরা হয়। যার পরিমাণ ৬.৭ লাখ টন। অথচ উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতি কাজে লাগালে সমুদ্র থেকে প্রায় ৮০ লাখ টন মাছ ধরা সম্ভব।
পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা যেখানে জিপিএস, সোনার, রাডার, নেভিগেশন চার্ট, ইকো সাউন্ডার, ফিস ফাইন্ডার, মেরিন ডেটা ব্যাংকের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলেরা এখনও প্রথাগত কাঠের নৌকা ও ম্যানুয়াল জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন। দেশের জেলেরা এসব প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ফলে মাছ ধরতে বেশি সময় লাগে, উৎপাদন কম হয় আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমারের আধুনিক প্রযুক্তির সম্পন্ন নৌযানগুলো বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় ঢুকে মাছ আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব বহিরাগতদের কাছে বাংলাদেশের জেলেরা অসহায় পড়েছে। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ আহরণকারীদের প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর আহরণকারীরা।
ফিশিং ট্রলার মালিক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ট্রলারে সমুদ্রের জাল ফেলানো ও তোলার জন্য উন্নত প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হলে দ্রুত জাল টেনে ছেলেরা নিরাপদে ফিরে আসতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে জাল কেটে দিয়ে তারা কূলে ফিরে আসে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকারে থাকা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমায় ৩৭৩ প্রজাতির মাছ আছে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৩০ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ, বিক্রি ও বিপণন হয়। আহরণযোগ্য বিশাল মৎস্য সম্পদ অধরাই রয়ে যাচ্ছে। ফলে সুনীল অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির স্বপ্ন অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়ৎদার আব্দুর রহিম খান বলেন, মৎস্য শিল্পের বিপ্লব ঘটাতে হলে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে জেলেদের। এতে জেলেরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে পারবে।
পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেদের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের জেলেরা এমন প্রত্যাশা মৎস্য সংশ্লিষ্টদের। এফবি তামান্না ট্রলারের মাঝি ইউনুস মিয়া বলেন, ভারত ও মায়ানমারের জেলেরা জিপিএস ও সোনার ব্যবহার করে সমুদ্রের মাছের অবস্থান নিশিত হয়ে জাল ফেলে। তাই তারা মাছ বেশি পায়। আর আমরা ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস করে জাল ফেলি।
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ ধরার পরিকল্পনা রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরের। তবে অপরিকল্পিতভাবে ও মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে