​বিপৎসীমার ওপরে দক্ষিণাঞ্চলের নদীর পানি

আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ১০:৩৬:২৪ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ১২:১০:৪০ অপরাহ্ন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই বৃষ্টি হচ্ছে। সেইসঙ্গে বাতাসের গতি বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে নদনদীর পানি। আবহাওয়া অফিস বলছে, উপকূলীয় এলাকায় এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কীর্তনখোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব নদীর পানিই এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বরিশাল নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকার নদীর তীরবর্তী জনপদ পানিতে তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানিতে গরু-ছাগল ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালের পর থেকেই নদনদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে শুরু করে। ফলে জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে এলাকাগুলোতে। বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ পানিবাহিত রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।সংশ্লিষ্ট এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী এলাকা নগরীর পলাশপুর, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর, কেডিসি, ভাটিখানা, কাউনিয়া, ধান গবেষণা রোড এবং কালিজিরা নদীর তীরবর্তী এলাকা পানিতে ডুবে আছে। পাশাপাশি সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, চরকাউয়া, চন্দ্রমোহন, টুঙ্গিবাড়িয়া এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে আছে।বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেশি পানি বেড়েছে মেঘনা, সুরমা এবং তেঁতুলিয়া নদীতে।

এ ছাড়া বিষখালী, বুড়িশ্বর, আড়িয়াল খাঁ, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, পায়রা, কারখানা, কচা, বলেশ্বর নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নিম্নচাপের কারণে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। এ কারণে জোয়ারের সময় প্রায় প্রতিটি নদীর পানিই বিপৎসীমার ওপরে চলে যায়। ভাটা শুরু হলে পানি কমবে বলেন তিনি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় শহর বরিশালের থেকেও নদীর জোয়ারের পানিতে বেশি তলিয়েছে জেলার বাকেরগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী এবং বাবুগঞ্জ উপজেলা। তা ছাড়া ভোলার প্রায় প্রতিটি উপজেলাই পানিতে নিমজ্জিত। পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার নিম্নাঞ্চলও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে আছে।বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা শেখ সেলিম রেজা জানান, নদীতে পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে কোনো ধরনের লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। স্পিডবোট চলাচল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মিলন হাওলাদার জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় থেমে থেমে হালকা এবং ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪.০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।তিনি বলেন, নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম না করা পর্যন্ত পানি বাড়তে থাকবে। এ সময় বরিশাল অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এ কারণে পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর ও বরিশাল নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান, হলতা, ধানসিড়িসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গ্রামের মাটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে নদীর তীরবর্তী জনপদ ও চরাঞ্চলে ৭ মিটার পানি জমেছে। রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া, নিজামিয়া, পালট, বাদুরতলা এবং নলছিটির নাচনমহল, ভবানিপুর, কাঁঠালিয়ার আমুয়া, পাটিকালঘাটাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার সুগন্ধা, গাবখান, বিষখালী, ধানসিড়ি ও হলতা নদীর পানির উচ্চতা গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে।উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় থেমে থেমে বইছে দমকা হাওয়া ও ঝড়বৃষ্টি । অদূরবর্তী চরগুলোয় ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে ইলিশার গ্যাংওয়ে।

লক্ষ্মীপুরে কমলনগরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬-৭ ফুট বেশি জোয়ারের পানি নদী থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে লোকালয় পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে।শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে ভাটায় নামতে শুরু করে পানি। কমলনগর উপজেলার চরফলকন, সাহেবের হাট, পাটোয়ারীর হাট, চরমার্টিন ও কালকিনি ইউনিয়নের বেশিরভাগ অঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।নোয়াখালীর হাতিয়ায় শুক্রবার দুপুর থেকেই জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ফলে উপজেলার নলচিরা, চানন্দী, চরঈশ্বর, চরকিং, সুখচর, সোনাদিয়া, তমরদ্দি, জাহাজমারা ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়। সম্পূর্ণ তলিয়ে যায় নিঝুমদ্বীপের প্রধান সড়কটি।

এদিকে, উত্তাল সমুদ্র ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কুয়াকাটা সৈকতে গোসলে নেমে জোয়ারের প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়া পর্যটককে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় জেলেরা। উদ্ধারকৃত পর্যটকের নাম তানভীর হাসান (২৩), তিনি রাজধানী ঢাকার নবাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। জেলেদের সাহসী অভিযানে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। শুক্রবার দুপুরে কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম পাশে হোটেল সৈকত সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এ ঘটনা ঘটে।জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে আবারও মেরিন ড্রাইভের কক্সবাজারের টেকনাফের আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, জোয়ারের ধাক্কায় মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হচ্ছে। ধসে পড়ছে জিও টিউব বাঁধ। টেকনাফের মুন্ডার ডেইল, বাহারছড়া ও শীলখালীর একটি অংশ ভেঙে গেছে। জোয়ারের আঘাতে ভেঙে পড়া ঝাড় গাছ সাবরাং মুন্ডার ডেইল ঘাটে দুই শ্রমিক দিয়ে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।এসব তথ্য দিয়েছেন বরিশাল ব্যুরো, ঝালকাঠি প্রতিনিধি, ভোলা, লক্ষ্মীপুরে কমলনগর, নোয়াখালীর হাতিয়া, পটুয়াখালীর মহীপুর, বরগুনা, কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :