​চট্টগ্রামে সরকারি জায়গা উদ্ধারে পাউবোর অভিযান

আপলোড সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ০১:৪১:৩৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ০৩:১৩:১২ অপরাহ্ন
চট্টগ্রামে ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ একর সরকারি জায়গা উদ্ধারে ১৬ বছর পর অবশেষে কঠোর অভিযানে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরের উত্তর হালিশহর থেকে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার (১৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তর কাট্টলী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সাগরিকাস্থ সাগর উপকূলঘেঁষা বেড়িবাঁধ ও বন্দর লিংক সড়কের পাশে মিনি স্টেডিয়াম এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান করা হয়। 

অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তারা হলেন, জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার হুছাইন মুহাম্মদ, পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারিস্তা করিম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুল হাসান। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিন টানা চলবে উচ্ছেদ অভিযান।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় হওয়ার পর পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যদিও তা ঠেকাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেও উচ্ছেদ ঠেকাতে পারেননি প্রভাবশালীরা। 

পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এসব জমি উচ্ছেদে রোববার থেকে অভিযান শুরু করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয়ে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন। স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলদারদের হাত থেকে দুখলমুক্ত জমিতে পিলার ও কাটাতার দিয়ে সংরক্ষণ করে বনায়ন করা হবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই উচ্ছেদ ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দিদারুল আলমের দখলে থাকা ৭ একর জায়গাজুড়ে কাভার্ডভ্যান ও স্কেভেটার ইয়ার্ড রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুর দখলে রয়েছে পাউবো’র আড়াই একর জায়গা। আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু দশমিক ৪২ একর জায়গা বছরে ১৫ লাখ টাকায় মুনছুর মিস্ত্রি কাছে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, দশমিক ৩৮ একরের আরেকটি জায়গা আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে ১৮ লাখ টাকায়, দশমিক ৫৪ একরের আরেকটি জায়গা আব্দুল মমিনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ভাড়া এবং নিজে দশমিক ৮৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। একইভাবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম দশমিক ০১৬২ একর জায়গা ট্রলি ডিপো ভাড়া দিয়ে বছরে ১৮ লাখ টাকা আদায় করছেন। 

এভাবে ৩৯ প্রভাবশালী ‘ভূমিখেকোর’ পেটে চলে গেছে চট্টগ্রামের হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকার পাউবো’র ৩২০ কোটি টাকার ৩২ একর জমি। ১৯৭২ সালে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। গত ১৬ বছর ধরে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, স্কেভেটর ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পকেটে হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমিখেকোরা।

পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, শহর রক্ষা বাঁধ করতে সত্তরের দশকে ২৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিছু অংশ বাঁধ কাম সড়ক হলেও অধিকাংশ জায়গা জমি শ্রেণিতে রয়ে গেছে। সেই জমিতে ৩৯টি দখলদার কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। 

এছাড়া চট্টগ্রামের সাগরপাড়ের দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় পাউবো’র দুই একর জায়গা ১৬ বছর ধরে দখল করে ১২টি আধাপাকা ঘর বানিয়ে এরশাদ উদ্দিন বছরে ১৫ লাখ ভাড়া নিচ্ছেন। তার পাশে গোলাপুর রহমানের দখলে আছে দুই একর জায়গা, সেখানে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড ভাড়া দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টাকা আয় করছেন। তাদের মতো দক্ষিণ কাট্টলীতে দশমিক ৪৯ একর জমি আকরাম সিদ্দিক চৌধুরী স্কেভেটর ইয়ার্ড ভাড়া দিয়ে বছরে ১২ লাখ টাকা ভাড়া নেন। হুমায়ুন কবির চৌধুরী দশমিক ৫০ একর দখল করে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, নুরুল হুদা চৌধুরী ৭ একর দখল করে কাভার্ডভ্যান, ছালাউদ্দিন ইউছুফ ৪ একর জমি দখল করে মিনি স্টেডিয়াম ও ইয়ার্ড ব্যবসা, এভাবে আরাফাত হোসেন, মো. জুয়েল,  মা. মোশারফ, কোরবান আলী, মোহাম্মদ আলী, লিটন মিয়া, ইলিয়াছ মিস্ত্রী, আবদুল জলিল, জামাল আহম্মদ, মো. রনি, মো. জনি, মো. নাছির, মো. হোসেন, মো. মনির, মো. ওয়াহিদ, নিজাম উদ্দিন মামুন, ওয়াহিদ, ওমর ফারুক, মিজানুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান, জাহাঙ্গীর ও মীর আহাম্মদ, জাকের মিস্ত্রী, জানে আলম বুলু ও হাজী মো. শাহজাহানরা মিলে ৩২ একর জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব সরকারি জমিতে ১৩টি বিশাল কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, ১০টি গাড়ির গ্যারেজ ডিপো, তিনটি ট্রলি ইয়ার্ড, তিনটি ডেইরি ফার্ম ও চারটি কলোনি গড়ে ওঠেছে।

বাংলাস্কুপ/ প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :