বর্ষায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব, সারা দেশে ছয়জনের মৃত্যু

আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৪:৪৪:০২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৪:৪৬:০৮ অপরাহ্ন
দেশজুড়ে সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। মাগুরা, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, ভোলা ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ছয় জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের কেউ কেউ সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন। বর্ষার মৌসুমে বাড়তি গর্ত, জলজমা ও পচা পাতার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাপের এ উপদ্রব দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সাপের কামড়ের পর সময়মতো হাসপাতালের চিকিৎসা না নিলে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে। তাঁরা বলছেন, সাপের কামড়ের পর ঝাড়ফুঁক বা অন্য ঘরোয়া প্রতিকার নয়, দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াই প্রাণ রক্ষার একমাত্র উপায়। 

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত--

মাগুরা 
মাগুরার মহম্মদপুরে বিষধর সাপের কামড়ে লামিমা জাকিয়া (১৩) নামে এক মাদরাসাছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সাপে কামড়ের পর তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রোববার (৬ জুলাই) উপজেলার দাতিয়াদহ গ্রামে নিজ বাড়ির বিছানায় ওই ছাত্রীকে সাপে কামড় দেয়। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহম্মদপুর থানার ওসি আব্দুর রহমান। লামিমা ওই গ্রামের মামুন শেখের মেয়ে। সে বাবুখালী আদর্শ দাখিল মাদরাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। 

নিহতের পারিবার জানায়, লামিমা রোববার রাতে খাবার খেয়ে তার বেডরুমে শুয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে পড়ার আগেই হঠাৎ তাকে একটি সাপ কামড় দেয়। বিষয়টি সে বুঝতে পেরে চিৎকার দিলে তার বাবা-মা ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে তাকে মো. আবির হোসেন নামে একজন ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক দেওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার এ অকাল মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মহম্মদপুর থানার ওসি আব্দুর রহমান বলেন, বিষধর সাপের কামড়ে লামিমা জাকিয়ার মৃত্যু হয়েছে।

টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের মধুপুরে সাপের কামড়ে সিঙ্গাপুর থেকে সম্প্রতি দেশে ফেরত আসা রায়হান (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৭ জুলাই) সকাল ১০টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন। মৃত রায়হান মধুপুর পৌর এলাকার বিপ্রবাড়ী গ্রামের জনৈক বাছেদ আলীর ছেলে।  

নিহত রায়হানের চাচি শরীফা খাতুন জানান, রোববার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় বাড়ির কাছের ময়মনসিংহ সড়কের বিএডিসি ফার্ম এলাকার চাঁদের হাসি কফি হাউসের সামনে ঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন রায়হান। এ সময় পায়ে অজ্ঞাত পোকার কামড় অনুভব করেন তিনি। অবহেলা করে সময় পার হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে বাড়িতে ফিরে আনা ও সর্বশেষ রাত ১টার দিকে জটিল অবস্থায় ময়মনসিংহ নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে সাপে কামড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয় চিকিৎসকরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির বলেন, আমার কাছে এমন তথ্য নেই।

চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের পটিয়ায় কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে মোহাম্মদ সাগর (১৯) নামের এক পরীক্ষার্থী বিষাক্ত সাপের কামড়ে আহত হন। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পর এ ঘটনা ঘটে। এ কারণে হল ছেড়ে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সোমবার (৭ জুলাই) খলীল মীর ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রের হলে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরহানুর রহমান।

আহত পরীক্ষার্থী হুলাইন সালেহ নূর ডিগ্রি কলেজে অধ্যয়নরত এইচএসসি পরীক্ষার্থী। জানা যায়, সাগর উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্দা গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে। ঘটনার পরপরই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরীক্ষা শেষের ১৫ মিনিট আগে কেন্দ্রে ফেরে; কিন্তু তাকে মানবিক বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা শেষে ওই পরীক্ষার্থীকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

পটিয়া উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা. নওশাত বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে নিয়ে আসা শিক্ষার্থী এখনও পটিয়া হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরহানুর রহমান বলেন, কেন্দ্র সাপে কাটা শিক্ষার্থীকে ইচ্ছা করলে মানবিক কারণে হলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুযোগ দিতে পারতেন। তিনি নিজ উদ্যোগে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে কিছু করা যায় কিনা দেখবেন।

ভোলা 
ভোলার মনপুরা উপজেলায় নিজের পোষা বিষাক্ত সাপের কামড়ে মো. শাকিল (২৬) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শাকিল উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা খোকন মাঝির ছেলে। সে পেশায় একজন জেলে ছিলেন। রোববার (৬ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।এর আগে শনিবার (৫ জুলাই) বিকেল ৬টায় উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সাকুচিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধের ওপর সাপের খেলা দেখাতে গেলে ওই যুবককে সাপে কামড় দেয়। 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ দিন আগে স্থানীয় মোয়াজ্জেল সৈয়ালের বাড়ি থেকে শাকিল সাপটিকে উদ্ধার করে লালন-পালন করছেন। সাপটি বিষধর হওয়া সত্বেও শাকিল সেটিকে নিয়ে খেলায় মেতে থাকতেন। শাকিল দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ পালন করে আসছেন। গত তিন মাস আগে খেলা দেখাতে গিয়ে একটি সাপ শাকিলের পায়ে কামড় দেয়। পরে তাড়াহুড়ো করে শাকিল নিজেই কামড় দেওয়া স্থান মুখ দিয়ে চুষে বিষ নামিয়ে ফেলেন। 

শাকিলের পরিবার আরো জানায়, শনিবার বিকেলে সাপ নিয়ে স্থানীয় বেড়িবাঁধ এলাকায় খেলা দেখাতে গেলে উৎসুক মানুষের সামনে তার পায়ের উরুতে কামড় দেয় সাপটি। আগের মতো চুষে বিষ নামিয়ে সাপটিকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু এবার কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন। পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ে রশি বেঁধে দেন। এ সময় স্থানীয় এক কবিরাজের চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করে পায়ের বাঁধটি খুলে দেওয়া হয়।  এর কিছুক্ষণ পর শাকিলের শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সে ছটফট করতে থাকেন।

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মনপুরা উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আশিকুর রহমান অনিক বলেন, ‘সাপের বিষ শাকিলের শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। দ্রুত এন্টিভেনম দেওয়ার পরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি।’

ফরিদপুর
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিষধর সাপের কামড়ে আফরান মুন্সি (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৭ জুলাই) রাতে উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের চারাভিটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আফরান ওই গ্রামের মৌলভী বাড়ির মৃত মো. হাতেম মুন্সীর ছেলে। তিনি স্থানীয় কাজী ওয়ালীউল্লাহ হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়তো। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে খাওয়া শেষে নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান আফরান। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ওই সময় তাকে একটি সাপ কামড় দেয়। এতে অসুস্থতা বোধ করেন তিনি। পরে ঘরের সবাইকে ডেকে তুলে এবং আস্তে আস্তে আরফান তীব্র ব্যথায় নিস্তেজ হতে থাকে। রাত ২টার দিকে তাকে ভাঙ্গা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এ কিশোরকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত কিশোরের চাচা ইমরান মুন্সি বলেন, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, বাড়িতে থাকা পোশা বিড়ালে হয়তো তাকে কামড় দিয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভাঙ্গা হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদেরকে জানায়, তাকে বিড়াল নয় বিষধর সাপে কামড় দিয়েছে। দীর্ঘ সময় হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
 
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :