বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ

​ঘরে ঘরে এডিসের লার্ভা

আপলোড সময় : ২৫-০৬-২০২৫ ০২:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৫-০৬-২০২৫ ০৩:১৭:০৩ অপরাহ্ন
বরগুনায় ঘরে ঘরে মিলছে এডিস মশার লার্ভা। জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও সংরক্ষণ করা বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে এডিসের লার্ভা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতন না হলে শুধুমাত্র মশক নিধনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ শুধু কঠিন কাজই নয়, এটি পুরোপুরি অসম্ভব। এদিকে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন বলছে, যে বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যাবে তাদের আনা হবে আইনের আওতায়। 

আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, দেশে এ বছর ডেঙ্গু শনাক্ত সাত হাজারের মধ্যে আড়াই হাজারেরও বেশি শুধুমাত্র বরগুনায়। ৩০ মৃত্যুর ২১ জনই এ জেলার বাসিন্দা। এরইমধ্যে বরগুনাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ অবস্থা পিছনের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ডেঙ্গু মহামারীর কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, শীত মৌসুমে সুপেয় পানির সংকট কাটাতে বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা উপজেলায় ঘরে ঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে বৃষ্টির পানি। আর এসব পানিতেই তৈরি হয়েছে এডিস মশার লার্ভা। ভয়াবহ এই অবস্থার মধ্যে পড়ে এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মশার উৎপাতে ঘর ছাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বরগুনা সদরের আমতলারপাড় এলাকার বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র জয়ধর বলেন, “মশার উৎপাতে ঘর ছাড়ার মতো অবস্থা হয়েছে। মশারির বাইরে বের হলেই মশার কামড়। কয়েলেও কাজ হচ্ছে না।”একই এলাকার বাসিন্দা আবু সালেহ মুসা বলেন, “বসত ঘরে মশার পরিমাণ এত বৃদ্ধি পেয়েছে মনে হয় ঘরটা মশাদের আমরা ভাড়া থাকি। পৌর প্রশাসকরা ডেঙ্গু নিধনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মশা নিধনে বরাদ্দ আছে শুনেছি। কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখিনি।”একই অবস্থা দক্ষিণ মনসাতলী এলাকার বাসিন্দাদের। এই এলাকার বাসিন্দা মৃদুল, জাহিদ, কলি, সানি রাসেলসহ একাধীক স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি ঘরে ঘরে মশার বাসস্থান হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘরে ডেঙ্গু রোগী। মনসাতলী এলাকার মো. মিরাজ বলেন, “এই এলাকার প্রতিটি ঘরের ৫ জনের ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। কিন্তু মশক নিধনে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মহামারী থেকে বাঁচতে গোটা এলাকায় মশা মারার ওষুধ দিতে হবে।”

এদিকে এডিসের লার্ভা নিধনে পৌর কর্তৃপক্ষ কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের দৃশ্যমান কোন কর্মসূচি না থাকলেও মাঠে দেখা গেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। তাদের দাবি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি ও লার্ভা নিধনে কাজ করছেন তারা। বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট এর উপ যুব প্রধান মো. সজিব হোসেন বলেন, “প্রতিটি ঘরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর সব ঘরেই এডিসের লার্ভা পেয়েছি আমরা। অসচেতন উপায়ে পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা তাদের সচেতন করছি, পাশাপাশি এডিসের লার্ভা নিধন করছি।”

উপকূলীয় এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ অনুসন্ধান শেষে আইইডিসিআরের অনুসন্ধানকারী দলনেতা ডা. তারিকুল ইসলাম লিমন বলেন, “সুপেয় পানির সংকট দূর করতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে প্রাণ হারাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। আমরা অনুসন্ধান শেষ করেছি। এখন একটি দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের পরিকল্পনা করছি।”বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফাত্তাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাসিন্দাদের সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবকরাও সহায়তা করছেন। পৌর প্রশাসকদের সমন্বয়ে জোরদার করা হবে মশক নিধন কার্যক্রম।”বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক বড় এলাকা। আমরা চিহ্নিত করে পরিকল্পিতভাবে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। একটু সময় লাগছে কিন্তু সমাধান হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে, আমাদের সহায়তা করতে হবে।”

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম বলেন, “মানুষকে সচেতন করতে আমরা সর্বোচ্চটুকু করেছি। এখন যদি পানি সংরক্ষণে সচেতন না হয় তবে আমরা কঠোর হবো। এরপর যে বাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গুর লার্ভা পাবো তাদের আইনের আওতায় আনব।” গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৫ জন। এ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৩৭ জন। এখনো যতি বরগুনাবাসী সচেতন না হন তাহলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।


বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :