চারদিকে নদী থাকা স্বত্ত্বেও রাজবাড়ীতে পানির অভাবে বাড়ছে সেচ খরচ

​নদীর বুকে পানির অভাব!

আপলোড সময় : ১৪-০৫-২০২৫ ১২:৩৭:৫০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৪-০৫-২০২৫ ১২:৩৭:৫০ অপরাহ্ন
রাজবাড়ী নদীবেষ্টিত জেলা হলেও বর্ষা মৌসুম ছাড়া প্রায় সারা বছরই পানিশূন্য থাকে এখানকার বিভিন্ন নদী ও খাল-বিল। শুষ্ক মৌসুমে এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। বর্তমানে পদ্মা ও গড়াই নদী ব্যতীত অন্য নদী ও খালের প্রায় সবগুলোই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। যার কারণে একদিকে যেমন নদী ও খাল-বিলে কমেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ, তেমনি অন্যদিকে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানির সুবিধা না পেয়ে কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এ অবস্থায় বড় নদী ও খালের সঙ্গে সংযুক্ত শাখা নদী ও খালে পানির প্রবাহ নিশ্চিতকরণে পুনঃখনের পাশাপাশি পাংশায় পদ্মা নদীর ওপর গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি সাধারণ মানুষের।

জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা, গড়াই, হড়াই, চত্রা, চন্দনা, মরাকুমার, সিরাজপুর, হাজরাখালীসহ ছোট-বড় ১০টির বেশি নদী ও ৫০টি খাল। নদী বেষ্টিত জেলা হলেও রাজবাড়ী কৃষি প্রধান জেলা হিসেবেই বিবেচিত। এই জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে পদ্মা নদী এবং অন্যান্য উপজেলা মধ্যে গড়াই, হড়াই, চন্দনা, চত্রা নদীসহ প্রবাহমান রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য খাল-বিল। কিন্তু বর্ষা মৌসুম ছাড়া বড় কয়েকটি নদী ব্যতীত সারাবছরই শুকনো থাকে অন্যান্য নদী ও খাল-বিল। ফলে শুষ্ক মৌসুমে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানির অভাবে ব্যাহত হয় সেচ কাজ। এই সময়ে ভূগর্ভস্থ পানিরও সংকট দেখা দেয়। বিভিন্ন স্থানে টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিনে ঠিকঠাক পানিও ওঠে না। অপরিকল্পিতভাবে নদী ও খাল খনন এবং মূল নদী থেকে শাখা নদী ও খাল-বিলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দিন দিন এই সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে।

এদিকে নদীতে পানি ধরে রাখতে জেলার পাংশায় গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, পাবনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শুষ্ক মৌসুমে নদীসহ উন্মুক্ত জলাশয়ের পানির অভাব দূর হবে।রাজবাড়ী সদরের মিজানপুরের কৃষক আব্দুস সাত্তার মোল্লা ও রফিক বলেন, পদ্মাসহ বড় বড় নদী থাকলেও শুকনো মৌসুমে আমাদের পানির সমস্যা হয়। এসময় পদ্মাসহ খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যায়। যার কারণে টিউবওয়েল ও মেশিনেও ঠিকভাবে পানি ওঠে না। নদীর কাছের আমরা কোনো রকম পানি পেলেও দূরের এলাকায় পানির খুব সমস্যা হয়। মেশিনে পানি কম ওঠার কারণে সেচ কাজে খরচও বেড়ে যায়। নদী ও খালগুলো ভালোভাবে খনন করে পানি রাখার ব্যবস্থা করলে সেচের জন্য ভালো হতো এবং ফসলও ভালো ফলাতে সুবিধা হতো।

কালুখালী মদাপুরের কৃষক মজনু ও চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, পানির অভাবে আমরা ফসল ঠিকমতো ফলাতে পারছি না। শ্যালো মেশিনে ঠিকমতো পানি ওঠে না। এখন যে পানি উঠছে তাতে এক লিটার তেলে ৫ শতাংশ জমি ভেজানো যায়। এভাবে পানি দিয়ে পোষায় না। আর আমাদের কৃষি জমির পাশে খাল থাকলেও সারা বছরই তা শুকিয়ে থাকে। এ খালে পানি থাকলে এবং এই পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারলে কৃষিতে উন্নতি করতে পারতাম। পানি ঠিকমতো না দিতে পারায় সার ডাবল দিতে হয়। যার কারণে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খালগুলো গভীর করে খনন করে নদীর সঙ্গে যুক্ত করলে পানি থাকবে। চন্দনীর কৃষক আব্দুস সালাম, করুনেষ কুমার দাসসহ কয়েকজন বলেন, এই হড়াই নদীতে ৮-১০ বছর আগেও পানি থাকত। এই পানিতে গরু-বাছুর গোসল করানোসহ কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারতাম এবং মাছও থাকত। কিন্তু এখন নদীতে পানিই নাই। যার কারণে অনেক অসুবিধা হচ্ছে।

রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, দেশে প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে শ্যালো মেশিন ও টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। নদী-নালায় পানি না থাকা ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ সংকট সমাধানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর টেকনোলজির পরিবর্তন করে সাব মার্সেবল ও তারা পাম্প ব্যবহারের করছে।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম রাসুল বলেন, রাজবাড়ী পদ্মা নদীবেষ্টিত জেলা হলেও এ জেলার মধ্যে গড়াই, হড়াই, চন্দনাসহ বেশ কিছু নদী ও খাল রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে পানি কমে গেলে এসব নদী ও খালে পানি থাকে না। যার কারণে বোরো মৌসুমে সেচ কাজ ঠিক রাখতে জেলার বিভিন্ন স্থানে গভীর ও অগভীর নলকূপকে নিচের দিকে নামাতে হয়। তারপরও সেচ কাজে পর্যাপ্ত পানি পাওয়ায় বোরোসহ অন্যান্য ফসলের সেচ কাজে ব্যাঘাত ঘটে। শাখা নদীগুলোর মুখে ড্যাম বা রাবার ড্যাম তৈরি করে মূল নদী থেকে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কৃষি কাজে নদী-নালা, খাল-বিলের পানির ব্যবহার করতে পারলে খরচ অনেকটা কমে যাবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, রাজবাড়ীতে পদ্মা-চন্দনাসহ বিভিন্ন নদী প্রবাহমান রয়েছে। ভাটির দেশ হিসেবে নদীর পানি ধরে রাখতে ব্যারেজ কার্যক্রম নিতে হবে। তবে রাজবাড়ীর পাংশায় গঙ্গা ব্যারেজ কার্যক্রমের সমীক্ষা চলমান আছে। ভবিষ্যতে ব্যারেজ করতে পারলে নদী ও খালে পানি ধরে রাখা যাবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :