
চলমান গরমে ডাবের চাহিদা বেড়েছে সারাদেশে। তবে অন্যান্য জেলার চেয়ে ভোলার ডাবের চাহিদা বেশি। তাই ভোলার কৃষকদের ডাব বিভিন্ন হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশে। এরমধ্যে সব চেয়ে বেশি পরিমাণ ডাবই চলে যায় ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি আড়তে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে পাইকাররা কম দামে ডাব কিনলেও ঢাকার বাজারে বিক্রি করেন উচ্চ মূল্যে। তাই বাজারে ডাবের দাম বেশি হলেও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলার মনপুরায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় ৬০-৭০ জন পাইকার রয়েছেন যারা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ডাব কেনেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট, মনপুরা, দক্ষিণ সাচুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া ও কলাতলির চরে ঘুরে বেড়ান তারা। ডাবের দর-দাম করে কিছু টাকা বায়না করে যান তারা। পরের দিন সকাল ৬টা থেকে ওই ডাব গাছ থেকে কাটতে থাকেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাটেন। পরে অটোরিকশা ও ভ্যানে করে নিয়ে যান যার যার গোডাউনে। সেখান থেকে ওই দিনই স্টিমার ও লঞ্চে করে পাঠিয়ে দেন ঢাকার পাইকারি আড়তে।
হাজিরহাট ইউনিয়নের চর ফৈজুদ্দিন গ্রামের কৃষক মো. আব্বাস উদ্দিন জানান, তার আগে ২০০ থেকে ৩০০ নারিকেল গাছ ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে অনেক গাছ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় শতাধিক গাছ রয়েছে। ওই গাছ থেকে প্রতি বছরই তিনি ডাব বিক্রি করে থাকেন। এবছরও তিনি মার্চ মাস থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত ২ হাজার পিস ডাব বিক্রি করেছেন। ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে তাকে পাইকাররা দিয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো পেয়েছেন। দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতি বছরই তিনি গাছের ডাব বিক্রি ভালো টাকা আয় করেন থাকেন। ডাব বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি আরও কিছু নারিকেল গাছের চারা লাগিয়েছেন। কিছু টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন আর কিছু টাকা দিয়ে তিনি গরু কিনেছেন। তিনি আরও জানান, ডাবের ব্যাপারীরা আমাদের কাছে এসে প্রথমে ৩০ টাকা থেকে দাম বলতে থাকে। পরে বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকার বেশি পাই না। দিয়ে দিই, কারণ গাছ থেকে ডাব কাটার কোনো টেনশন নেই। ওরাই লোকজন নিয়ে এসে ডাব পেড়ে নেয়। বাজারের তুলনায় কম টাকা পেলেও কিছু করার নেই।
একই ইউনিয়নের বাংলাবাজার গ্রামের কৃষক মো. জামাল হোসেন জানান, আমাদের থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দামে ডাব কেনে ব্যাপারীরা। অথচ ওই ডাব বাজারে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। মনপুরা ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের কৃষক মো. শাহে আলম জানান, মনপুরার ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট করে আমাদের থেকে কম দামে ডাব ক্রয় করে ঢাকার পাইকারি বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা যদি ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারি তাহলে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবো। কিন্তু একসঙ্গে বেশি ডাব বিক্রির উপযোগী হয় না। তাছাড়া বেশি পরিমাণ না নিয়ে গেলে ঢাকায় খরচ দিয়ে পোষাবে না। তাই ওদের কাছে বিক্রি করে থাকি।
মনপুরার ডাবের পাইকারি ব্যাপারী মো. জাহাঙ্গীর জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে মনপুরা থেকে ডাব কিনে ঢাকায় পাইকারি আড়তে বিক্রির করে আসছেন। প্রতি বছর চৈত্র মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত মনপুরার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গিয়ে ডাব ক্রয় করে থাকেন। মনপুরা উপজেলায় বর্তমানে তার মতো প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জনের অধিক পাইকার আছেন। কেউ দৈনিক ডাব ক্রয় করেন, কেউ সপ্তাহে, আবার কেউ মাসে ক্রয় করেন। মো. ইমন হোসেন জানান, তারা ডাব গাছের মালিকদের কাছ থেকে ৫০ টাকায় ডাব কিনে লোকজন দিয়ে গাছ থেকে পাড়ান। এরপর অটোরিকশা ও ভ্যান নিয়ে লঞ্চঘাটে নিয়ে যান। পরে লঞ্চ ও স্টিমারে করে ঢাকা সদর ঘাটের পাশের পাইকারি আড়তে পাঠান। ওই পর্যন্ত পাঠাতে শ্রমিক, অটোরিকশা, ভ্যান, লঞ্চ বা স্টিমার ভাড়া মিলে ১৪ থেকে ১৮ টাকার মতো খরচ পড়ে যায় প্রতি পিস ডাবে। অর্থাৎ কৃষক থেকে ৫০ টাকা কিনলেও সেটি প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা পড়ে যায়। পরে পাইকারি আড়তে আমরা ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি করতে পারি। তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, জেলার সাত উপজলার কৃষকরা নারিকেল গাছ লাগানোর দিকে ঝুঁকছে। আমরা তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও গত অর্থ বছরে আমরা প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৬ হাজার নারিকেল গাছের চারা দিয়েছি। এবছরও দেবো। তিনি আরও জানান, বর্তমানে জেলার সাত উপজেলায় ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ নারিকেল গাছ রয়েছে। গত অর্থ বছরে ১১ কোটি ৬ লাখ ৫৬ হাজার নারিকেল উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলায়।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলার মনপুরায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় ৬০-৭০ জন পাইকার রয়েছেন যারা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ডাব কেনেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট, মনপুরা, দক্ষিণ সাচুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া ও কলাতলির চরে ঘুরে বেড়ান তারা। ডাবের দর-দাম করে কিছু টাকা বায়না করে যান তারা। পরের দিন সকাল ৬টা থেকে ওই ডাব গাছ থেকে কাটতে থাকেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাটেন। পরে অটোরিকশা ও ভ্যানে করে নিয়ে যান যার যার গোডাউনে। সেখান থেকে ওই দিনই স্টিমার ও লঞ্চে করে পাঠিয়ে দেন ঢাকার পাইকারি আড়তে।
হাজিরহাট ইউনিয়নের চর ফৈজুদ্দিন গ্রামের কৃষক মো. আব্বাস উদ্দিন জানান, তার আগে ২০০ থেকে ৩০০ নারিকেল গাছ ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে অনেক গাছ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় শতাধিক গাছ রয়েছে। ওই গাছ থেকে প্রতি বছরই তিনি ডাব বিক্রি করে থাকেন। এবছরও তিনি মার্চ মাস থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত ২ হাজার পিস ডাব বিক্রি করেছেন। ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে তাকে পাইকাররা দিয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো পেয়েছেন। দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতি বছরই তিনি গাছের ডাব বিক্রি ভালো টাকা আয় করেন থাকেন। ডাব বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি আরও কিছু নারিকেল গাছের চারা লাগিয়েছেন। কিছু টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন আর কিছু টাকা দিয়ে তিনি গরু কিনেছেন। তিনি আরও জানান, ডাবের ব্যাপারীরা আমাদের কাছে এসে প্রথমে ৩০ টাকা থেকে দাম বলতে থাকে। পরে বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকার বেশি পাই না। দিয়ে দিই, কারণ গাছ থেকে ডাব কাটার কোনো টেনশন নেই। ওরাই লোকজন নিয়ে এসে ডাব পেড়ে নেয়। বাজারের তুলনায় কম টাকা পেলেও কিছু করার নেই।
একই ইউনিয়নের বাংলাবাজার গ্রামের কৃষক মো. জামাল হোসেন জানান, আমাদের থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দামে ডাব কেনে ব্যাপারীরা। অথচ ওই ডাব বাজারে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। মনপুরা ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের কৃষক মো. শাহে আলম জানান, মনপুরার ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট করে আমাদের থেকে কম দামে ডাব ক্রয় করে ঢাকার পাইকারি বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা যদি ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারি তাহলে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবো। কিন্তু একসঙ্গে বেশি ডাব বিক্রির উপযোগী হয় না। তাছাড়া বেশি পরিমাণ না নিয়ে গেলে ঢাকায় খরচ দিয়ে পোষাবে না। তাই ওদের কাছে বিক্রি করে থাকি।
মনপুরার ডাবের পাইকারি ব্যাপারী মো. জাহাঙ্গীর জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে মনপুরা থেকে ডাব কিনে ঢাকায় পাইকারি আড়তে বিক্রির করে আসছেন। প্রতি বছর চৈত্র মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত মনপুরার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গিয়ে ডাব ক্রয় করে থাকেন। মনপুরা উপজেলায় বর্তমানে তার মতো প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জনের অধিক পাইকার আছেন। কেউ দৈনিক ডাব ক্রয় করেন, কেউ সপ্তাহে, আবার কেউ মাসে ক্রয় করেন। মো. ইমন হোসেন জানান, তারা ডাব গাছের মালিকদের কাছ থেকে ৫০ টাকায় ডাব কিনে লোকজন দিয়ে গাছ থেকে পাড়ান। এরপর অটোরিকশা ও ভ্যান নিয়ে লঞ্চঘাটে নিয়ে যান। পরে লঞ্চ ও স্টিমারে করে ঢাকা সদর ঘাটের পাশের পাইকারি আড়তে পাঠান। ওই পর্যন্ত পাঠাতে শ্রমিক, অটোরিকশা, ভ্যান, লঞ্চ বা স্টিমার ভাড়া মিলে ১৪ থেকে ১৮ টাকার মতো খরচ পড়ে যায় প্রতি পিস ডাবে। অর্থাৎ কৃষক থেকে ৫০ টাকা কিনলেও সেটি প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা পড়ে যায়। পরে পাইকারি আড়তে আমরা ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি করতে পারি। তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, জেলার সাত উপজলার কৃষকরা নারিকেল গাছ লাগানোর দিকে ঝুঁকছে। আমরা তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও গত অর্থ বছরে আমরা প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৬ হাজার নারিকেল গাছের চারা দিয়েছি। এবছরও দেবো। তিনি আরও জানান, বর্তমানে জেলার সাত উপজেলায় ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ নারিকেল গাছ রয়েছে। গত অর্থ বছরে ১১ কোটি ৬ লাখ ৫৬ হাজার নারিকেল উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলায়।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন