দুই সপ্তাহে ১০ জনের প্রাণহানি

হাওরে বজ্রপাত আতঙ্ক

আপলোড সময় : ০৮-০৫-২০২৫ ০৩:১৫:৩০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৫-২০২৫ ০৩:১৫:৩০ অপরাহ্ন
কিশোরগঞ্জে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র ১৬ দিনে বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হঠাৎ করে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বজ্রপাতকে ঘিরে জনমনে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা স্থানীয়দের।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে কৃষক, শ্রমিক ও স্কুল শিক্ষার্থী রয়েছেন। বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে মাঠে কাজ করার সময় বা খোলা জায়গায় অবস্থান করার সময়। বজ্রপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে জেলার হাওরাঞ্চলে। বজ্রপাতে বেশি প্রাণহানির শিকার কৃষক ও শ্রমিকরা। হাওরাঞ্চলের পরই বজ্রপাতে নিহতের বেশি ঘটনা ঘটেছে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায়। এই উপজেলায় সর্বশেষ বজ্রপাতে নবম শ্রেণির দুই স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয় ও একজন গুরুতর আহত হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (৬ মে) কিশোরগঞ্জে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রী ও একজন কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে যাওয়ার সময় জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরটেকী এলাকায় বজ্রপাতে চরটেকী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী ফারিয়া জান্নাত ইরিনা (১৪) ও আদ্রিতা ইসলাম প্রিয়া (১৪) নিহত হয়। এসময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয় নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী ইমা আক্তার বর্ষা (১৪)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্ঞান ফেরে বর্ষার। একই দিন দুপুরে জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চমকপুর দক্ষিণ হাটি হাওরে ধান শুকাতে গিয়ে কৃষক কডু মিয়া (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার (৩০ এপ্রিল) জেলার ইটনা উপজেলার এলংজুরী ইউনিয়নের কাটটেংগুর হাওরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মোহাম্মদ অনোহল (৪৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়।

এর আগে গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) একদিনেই কিশোরগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে তিন কৃষক, এক কৃষানি ও এক জেলেসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে খড় শুকাতে গিয়ে ফুলেছা বেগম (৬৫) নামের এক কৃষানি বজ্রপাতে মারা যান। এর দুই ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর হাওরে ধান কাটার সময় ইন্দ্রজিত দাস (৩৬) ও কলমা হাওরে ধান কাটার সময় স্বাধীন মিয়া (১৪) নামের দুই কৃষক নিহত হন। একই দিন দুপুরেও জেলার বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আব্দুল করিম (৩৭) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। একই দিন বিকেলে জেলার কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান মো. শাহজাহান (৪২) নামের এক জেলে। এর আগে সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা মইশাকান্দা এলাকায় বজ্রপাতে আবু তাহের মিয়া (৫০) নামে এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়।

অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায়ই বজ্রপাত হয়, এতে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়। সরকারিভাবে বজ্রপাত প্রতিরোধে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও জনসমাগমস্থলে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইটনা হাওরের বাসিন্দা আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা বলেন, হাওরের কৃষক-কৃষানি ও শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে ধান কাটা, বহন করা, গাদায় তোলার কাজ করে। এসময় ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হলে কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে পড়তে হয় দুশ্চিন্তায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো নিরাপদ কোনো স্থান থাকে না। ফলে বজ্রপাতের সময় তারা খোলা মাঠেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যান। এতে হতাহতের ঘটে।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আমাদেরকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে বজ্রপাতের সময় ঘরের মধ্যে অবস্থান করুন এবং দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। খোলা জায়গা, উঁচু গাছ বা বিদ্যুৎ পরিবাহী বস্তু থেকে দূরে থাকুন। বজ্রপাত শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ে যান এবং বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, বজ্রপাতের ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাঠে কাজ করার সময় সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে। বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা এড়িয়ে ঘরের ভেতরে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা জানান, বজ্রপাতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে বজ্রপাত নিরোধের কোনো প্রকল্প আমাদের নেই।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 
 
 
 
  

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :