কাঁঠালের সুবাসিত গন্ধে ম-ম করছে মহাসড়ক
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৯-০৭-২০২৫ ০২:১৬:৫৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৯-০৭-২০২৫ ০৩:৪০:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কৃষকরা আশপাশের টিলা ও গ্রামের কাঁঠাল নিয়ে আসছেন মূল সড়কের ধারে। কেউ সাজিয়ে রাখছেন স্তূপ করে, কেউ আবার দাঁড়িয়ে আছেন পাইকারের আশায়। হালকা বাতাসে মিশে থাকা পাকা কাঁঠালের গন্ধ যেন জানান দিচ্ছে -এখন কাঁঠালের সময়।এই কাঁঠাল দুই-তিন হাত ঘুরেই চলে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাটে, বাজারে, এমনকি শহরের ফলের দোকানে। কাঁঠালের এমন সরবরাহে খুশি বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ই। মৌসুমি এই ফল শুধু খাদ্য নয়, অনেকের জীবিকার অন্যতম উৎসও বটে।
এমন চিত্র দেখা গেল, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারের (মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে) প্রাচীন কাঁঠালের হাটে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে বাজার বসলেও সোম ও বৃহস্পতিবার এখানে সাপ্তাহিক হাটের দিন।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে স্বাদ ও গুণে অনন্যা মৌলভীবাজারের কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের নানান প্রান্তে।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে ব্রাহ্মণবাজার হাটে গিয়ে দেখা যায়, চাষি ও ব্যবসায়ীরা কেউ বাইসাইকেলে, কেউ ঠেলাগাড়িতে, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কাঁঠাল নিয়ে হাটে আসছেন। এখানকার ক্রেতাদের মধ্যে পাইকার ও খুচরা ক্রেতা উভয়েই আছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার দরদাম, হাঁকাহাঁকিতে বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে। বাতাসে ছড়াচ্ছে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ।বাজারের যেদিকেই চোখ যায়, শুধু ছড়ানো-ছিটানো কাঁঠাল আর কাঁঠাল। চাষিরা জানান, এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় শত বছরের পুরোনো ব্রাহ্মণবাজারে কাঁঠালের মৌসুমে ভিন্ন আমেজ তৈরি হয়। কুলাউড়ার হিংগাজিয়া, পৃথিমপাশা, কর্মধা, বুধপাশা, টিলাগাঁও, হাজীপুর, লংলা, রাজনগরের তারাপাশা, টেংরাসহ আশপাশের বিভিন্ন টিলা ও চা-বাগান থেকে এখানে কাঁঠাল আসে। বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ, তাজপুর, ফেঞ্চুগঞ্জ, নবীগঞ্জ, শেরপুর, গোয়ালাবাজার, বিশ্বনাথসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে কাঁঠাল নিয়ে যান।
তারা জানান, এখনকার বিভিন্ন টিলা, বাড়ি ও চা-বাগান থেকে চাষিরা কাঁধে, ঠেলাগাড়িতে ও সাইকেলে করে কাঁঠাল নিয়ে সকাল থেকে হাটে আসা শুরু করেন। এসব চাষির কাছ থেকে স্থানীয় পাইকারেরা কাঁঠাল কিনে নিয়ে রাস্তার পাশে স্তূপ করেন। একেকটি স্তূপে ৫০ থেকে ৩০০ কাঁঠাল থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁঠাল কেনা-বেচা চলে।স্থানীয় বাসিন্দা সাহেদ আহমদ বলেন, আমি প্রতিবছর কাঁঠালের মৌসুমে আমার বাড়ির কাঁঠালসহ এখানকার বিভিন্ন বাগান ও বাড়িঘর থেকে কাঁঠাল কিনে এই হাটে বিক্রি করি।
কুলাউড়ার হিংগাজিয়া গ্রামের সমীরণ দাস বলেন, হাটে আসা স্থানীয় কয়েকজন চাষিদের কাছ থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০০ কাঁঠাল আট হাজার টাকায় কিনেছি। এখন দরদামে পোষালে পাইকারের কাছে বিক্রি করব।এই হাটে সমীরণ দাসের মতো অর্ধশতাধিক পাইকার আছেন, যারা স্থানীয় চাষিদের কাঁঠাল কিনে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে দুই-তিন হাত ঘুরে প্রায় দেড়-দুই গুণ বেশি দামে কাঁঠাল পৌঁছে খুচরা ক্রেতার কাছে।কাঁঠাল নিয়ে আসা লংলা এলাকার ফয়সাল মিয়া জানান, উনার বাড়িতে ছয়টি গাছ আছে। তিনি ৮টি কাঁঠালের দাম চাইছেন ৮ শত টাকা। দাম হচ্ছে ৫০০ টাকা। এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে।নবীগঞ্জের ব্যবসায়ী সুমন পাল ২৫০ কাঁঠাল কিনেছেন ১৭ হাজার ৫শত টাকায়। প্রতি হাটবারেই তিনি কাঁঠাল কিনতে ব্রাহ্মণবাজারে আসেন।
এই হাটে এসেছেন জেলা সদরের কয়ছর মিয়া। তিনি এই হাট থেকে ৫০টা কাঁঠাল কিনেছেন। বিক্রি করে ৫-৭ শত টাকা লাভ হবে।অপর ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, দাম মোটামুটি ভালা। তবে বিক্রি ভাগ্যের ওপরে। ২০০টি কাঁঠাল কিনেছি ১৪ হাজার টাকায়। এখন ক্রেতার অপেক্ষায় আছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, মৌলভীবাজারের টিলার মাটি কাঁঠাল চাষের উপযোগী। এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স