ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের তোড়জোড় সরকারের
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৭-০৭-২০২৫ ০১:৩৭:৫৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৭-০৭-২০২৫ ০১:৩৭:৫৪ অপরাহ্ন
ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার। এজন্য আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য একটি কর্মসূচি পরিকল্পনা করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হবে সাত থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে উৎপাদন হবে দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট। মূলত সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল (রুফটপ সোলার প্যানেল) স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা সচিব এবং অন্যান্য সব সচিবকে ১০০টিরও বেশি ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বাস্তবায়ন কৌশল উপস্থাপন এবং স্থানীয় পর্যায়ে পাইলট প্রকল্প শুরু করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ শিগগির জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে সমন্বয় সভা করবে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এ প্রসঙ্গে বলেন, কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে টেকসই উদ্যোগের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই রুফটপ সোলারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রুফটপ করা গেলে বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানির নির্ভরতা কমে আসবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও সব সরকারি হাসপাতালের ছাদে রুফটপ সোলার স্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে গত ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে রুফটপ সোলার স্থাপন করার পরিকল্পনাকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদ। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপন করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা। অন্যটি হচ্ছে, দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, পলিটেকনিকসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের ছাদে একই সময়ের ভেতর সমপরিমাণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সব বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা নিজেই অথবা সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। এ কার্যক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না। এমনকি প্যানেল স্থাপন, বিদ্যমান সংযোগের রেনোভেশন বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বহন করতে হবে না। বরং এ মডেলের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাদ ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য একটি ভাড়া পাবে, যা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলে সংযুক্ত হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অপারেটিং এক্সপেন্ডিচার (ওপেক্স) মডেলে রুফটপ স্থাপন করা হবে।
অন্যদিকে সরকারি অফিসের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য, সিস্টেমের ক্যাপাসিটি ভেদে প্রাক্কলিত মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সব সরকারি অফিস তার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাইবে। মন্ত্রণালয় সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সম্মিলিতভাবে বরাদ্দ প্রদান করবে। পরে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হবে। সরকারি অফিসগুলোর জন্য ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার (ক্যাপএক্স) মডেল অনুসরণ করা হবে। পাশাপাশি প্রতিকটি রুফটপ সোলার নেট মিটারিংয়ের আওতায় আসবে। যার মাধ্যমে গ্রাহকের বিল সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ রুফটপ সোলার থেকে উৎপাদিত গ্রাহকের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে। আবার যখন প্রয়োজন হবে তখন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণ করবে গ্রাহক। প্রতি তিন মাসে বিদ্যুৎ গ্রহণ ও সরবরাহ সমন্বয় করে তার বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করা হবে।
ইন্টারন্যাশনাল রিনিউবেল এনার্জি এজেন্সির ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুৎ প্রসার ও ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভারতে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ উৎপাদন হলেও বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ (১ হাজার ৫৮০ মেগাওয়াট) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কারণ ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুতে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে বড় অংশই অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ শতাংশ (আনুমানিক ৪ হাজার ৪৪৪ মেগাওয়াট) এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ (আনুমানিক ৮ হাজার ৮৮৮ মেগাওয়াট) নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ।এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে ৫ হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার স্থলভিত্তিক ৫৫টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেন্ডার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়ন হতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। প্যারিস চুক্তির ন্যাশনালি ডিটারমিনেন্ট কন্ট্রিবিউটর (এনডিসি) অনুযায়ী, বাংলাদেশের ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান জাতীয় গ্রিডে ৪০ শতাংশ হওয়ার কথা। সূত্র: কালবেলা
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স