হত্যা মামলায় কারাগারে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৪-০৭-২০২৫ ০৯:১১:০৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৪-০৭-২০২৫ ০৯:১১:০৯ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে জুলাই আন্দোলন-কেন্দ্রিক যাত্রাবাড়ী থানার কিশোর আব্দুল কাইয়ূম আহাদ হত্যা মামলায় কারাগার পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক খালেদ হাসান কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় কাজলা পুলিশ বক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হন কিশোর আব্দুল কাইয়ূম আহাদ। পরে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসান তার দুই পায়ে ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আলা উদ্দিন এ বছরের ৬ জুলাই ৪৬৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামি ও অজ্ঞাতনামা ১ থেকে ২ হাজার জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১১ সালে ১৭ মে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় খায়রুল হক ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
বিচারাঙ্গনে তুমুলভাবে আলোচিত-সমালোচিত এই বিচারপতির কয়েকটি রায় চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। তার নিয়োগ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। তাকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছিল কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে ডিঙিয়ে। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে ত্রাণ তহবিলের টাকা গ্রহণ করে নিজের চিকিৎসা করে সমালোচিত হয়েছিলেন।
অবসর গ্রহণ করার কয়েকদিন আগে তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেন। এতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতের পথ উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতির চূড়ান্ত সুযোগ তৈরি হয়। রাজনৈতিক একটি বিষয়কে আদালতের আওতাধীন করে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন বলে রায় দিয়েছিলেন তিনি।
এ ছাড়া বিতর্কিত একাধিক বিচারপতিকে শপথ পড়ানো, আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৮ আগস্ট ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইমরুল হাসান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তন এবং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। ২৮ আগস্ট দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন আরেক আইনজীবী। এর আগে ২৫ আগস্ট খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলেও এ বি এম খায়রুল হক, মোজাম্মেল হোসেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা-এই তিনজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এমনকি আপিল বিভাগে সাত বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে প্রকাশ্যে দেয়া রায়ের মূল অংশ ছিল পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। ওই অংশকে চূড়ান্ত রায়ে গায়েব করে দেন খায়রুল হক। তার সঙ্গে একমত হন মোজাম্মেল হোসেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান থাকাকালে এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। আইন কমিশনে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন এসএম সামসুল আলম। ২০১৩ সালে ক্ষমতার ব্যবহার করে সামসুল আলমকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান এ বি এম খায়রুল হক। সামসুল আলম চাকরি হারিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি ফেরত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছেন।
বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এইচবি/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স