ঢাকা , শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫ , ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিজস্ব সিদ্ধান্তেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ: চীন

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৮:৪১:৪১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৮:৫২:৫৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব সিদ্ধান্তেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ: চীন ​ইয়ারলুং ঝাংবো নদী। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকে ‘চীনের পূর্ণ নিজেদের’ বিষয় বলে দাবি করেছে বেইজিং। বুধবার (২৩ জুলাই) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মন্তব্য করে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, এই প্রকল্প নিচু এলাকার কোনো দেশকে ক্ষতির মুখে ফেলবে না। গত সপ্তাহেই চীন দক্ষিণ-পশ্চিম তিব্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইয়ারলুং ঝাংবো নদীর উপত্যকায় এই বিশাল পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করে। এই নদী ভারত অংশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত এবং পরে তা বাংলাদেশে যমুনা নামে প্রবাহিত হয়।

গুও বলেন, প্রকল্পটি নির্মাণ শেষ হলে পুরো নদীপথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চীন নদীর নিম্নপ্রবাহে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে পানি-সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় ও বন্যা মোকাবিলার বিষয়ে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করেছি এবং এই নদীপথ ঘিরে সব দেশের মানুষের কল্যাণে যৌথ সহযোগিতা আরও বাড়ানো হবে।

চীনের দাবি, তারা আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ব্যবস্থাপনায় সবসময় দায়িত্বশীল আচরণ করে এবং তাদের পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণে বহু বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই নতুন প্রকল্পটিও চীনের সর্বোচ্চ শিল্পমান মেনে তৈরি করা হচ্ছে।

প্রকল্পটিকে ঘিরে পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, এই প্রকল্প পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলগুলো এড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন যতটা সম্ভব অক্ষত থাকে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।

এই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প পাঁচটি ক্যাসকেড বা ধাপবিশিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে গঠিত হবে এবং এতে চীন প্রায় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করছে। প্রকল্পটি নির্মাণ শেষ হলে বছরে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যা বিশ্বের বর্তমান বৃহত্তম বাঁধ চীনের থ্রি গর্জেস ড্যামের তিন গুণ।

চীন এই প্রকল্পকে পানিবায়ু লক্ষ্য অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে দেখছে। তাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করা।

তবে ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য এটি পানি নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। চীন এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সম্ভাব্য সময়সীমা ও খরচ ছাড়া সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি। তথ্যের স্বচ্ছতার অভাব প্রকল্পটি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। 

চলতি বছরের শুরুতে ভারতীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, বাঁধটি নির্মাণের ফলে রাজ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে যেতে পারে। 

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার বলেন, শুধু পানি নয়, এই বাঁধ নদীর সঙ্গে আসা পলিমাটির প্রবাহও কমিয়ে দেবে, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এইচবি/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ