ঢাকা , শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫ , ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​১৫ লাখ বছরের পুরনো বরফ গলিয়ে জলবায়ু রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১৮-০৭-২০২৫ ০৭:১৯:৪৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৮-০৭-২০২৫ ০৭:১৯:৪৮ অপরাহ্ন
​১৫ লাখ বছরের পুরনো বরফ গলিয়ে জলবায়ু রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা ​ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বরফের নমুনা—যার বয়স ১৫ লাখ বছর বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই বরফ ধীরে ধীরে গলিয়ে উন্মোচন করতে চান জলবায়ু পরিবর্তনের এক অজানা অধ্যায়। খবর বিবিসির। 

অ্যান্টার্কটিকার গভীর বরফচাদর থেকে কাটা কাঁচের মতো স্বচ্ছ এই বরফের কোরের মধ্যে আটকে আছে হাজার হাজার বছরের জলবায়ু ইতিহাস। বিজ্ঞানীদের মতে, এতে লুকিয়ে থাকা তথ্য বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে “বিপ্লব” ঘটাতে পারে।

ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের কেমব্রিজের গবেষণাগারে মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বিশেষ কক্ষে রাখা হয়েছে বরফের বাক্সগুলো। সেখানে মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য ঢুকতে দেওয়া হয় প্রতিবেদকদের, পুরো শরীর ঢাকা গরম পোশাক পরে।

বরফ গবেষণা প্রকল্পের প্রধান ড. লিজ থমাস জানান, এই সময়কাল সম্পর্কে আমরা একেবারেই কিছু জানি না। পৃথিবীর ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়কে স্পর্শ করছি আমরা।

বরফের ভেতরে রয়েছে প্রাচীন ধুলাবালি, আগ্নেয়গিরির ছাই, এমনকি ক্ষুদ্র সামুদ্রিক শৈবালও। সাত সপ্তাহ ধরে বরফ গলিয়ে এই উপাদানগুলো আলাদা করে বিশ্লেষণ করা হবে।

এই গবেষণায় জানা যাবে ৮ লাখ থেকে ১৫ লাখ বছর আগের বাতাসের গতিপথ, তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কেমন ছিল।

বরফ গলিয়ে পাওয়া তরল নমুনা পরীক্ষা করা হবে এক বিশেষ যন্ত্রে—ইন্ডাকটিভলি কাপল্ড প্লাজমা ম্যাস স্পেকট্রোমিটার (আইসিপিএমএস)—যা ২০টির বেশি রাসায়নিক উপাদান ও ধাতু শনাক্ত করতে পারে।

এতে মিলতে পারে এমন সময়ের প্রমাণ, যখন পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বর্তমান সময়ের মতো ছিল—যা আমাদের ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তন বুঝতে সহায়তা করবে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বরফের কোরে থাকা প্রমাণ হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারবে মধ্য-প্লাইস্টোসিন ট্রানজিশন নামের এক রহস্যময় জলবায়ু পরিবর্তনকে। প্রায় ৮ থেকে ১২ লাখ বছর আগে পৃথিবীর গ্লেশিয়াল চক্র হঠাৎ ৪১ হাজার বছর থেকে বেড়ে ১ লাখ বছরে পরিণত হয়।

এ পরিবর্তনের পেছনের কারণ এখনও জলবায়ুবিজ্ঞানের “সবচেয়ে রহস্যময় প্রশ্নগুলোর” একটি।

এছাড়া, বরফের ভেতরে ধুলাবালির উপস্থিতি গবেষকদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে সেই সময়ে বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়েছিল—যা বর্তমান সময়েও এক বড় উদ্বেগ।

এই বরফ সংগ্রহে ছিল বিশাল আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যাতে ব্যয় হয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার। জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও পাঠানো হয়েছে একই বরফের কিছু অংশ।

বরফ সংগ্রহে অংশ নেওয়া প্রকৌশলী জেমস ভেল বলেন, যখন আমি সেটি হাতে ধরি, খুব সতর্কভাবে—এ এক অসাধারণ অনুভূতি ছিল।

অতীতে প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবী নানা জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, তবে আজকের পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে মানুষের ভূমিকা—বিপুল হারে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ।

এই বরফের গভীরে লুকিয়ে থাকা রেকর্ডই হতে পারে ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এআর/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ