ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ , ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উপহারের ঘর যখন গলার কাঁটা!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ০৪:১২:০১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ০৪:৫৯:৫১ অপরাহ্ন
উপহারের ঘর যখন গলার কাঁটা! সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
জামালপুরে উপহারের ঘর এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে হতদ্ররিদ্র মানুষের। ঘর দেয়ার আগে আশায় বুক বেঁধে ছিল নানা প্রতিশ্রুতির ঘোষণা। এখন ঘর আছে; তারপরও নিরাশা চারিদিক; নেই পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট। বিগত সরকারে লোকজন বলেছিলেন,তাদের পাশে থাকবেন তারা। এখন আর তাদের দেখাও মেলে না।

জামালপুর পৌরসভার নাওভাঙ্গা চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাবেক সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উপহারের ঘর ফাঁকা পড়ে আছে; অনেকেই থাকছেন না। অনেকেই ঘর বরাদ্দ পাবার পর একদিনের জন্যও আসেননি। আর যারা বসবাস করছেন তারা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি ইতিমধ্যেই ঘুরে দেখেছেন উপহারের ঘর বরাদ্দ দেয়া এলাকা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অনিয়ম দুর্নীতি।

জানা যায়, ২০২০ সালে জামালপুর পৌর এলাকার পাথালিয়ার নাওভাঙ্গা চরে সাবেক মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমি ও ঘর প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হয় দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রথম দফায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ছিল এক লাখ ৯০ হাজার টাকা; তা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেই প্রকল্পে জামালপুর পৌর এলাকার নাওভাঙ্গা চরে ১৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘর তালাবদ্ধ। আর যারা বসবাস করছেন তাদের সমস্যা যাতায়াতের রাস্তা। প্রায় ২ কিলোমিটার নদের চরের কাদামাটি পেরিয়ে সেখানে যেতে হচ্ছে।  বিদ্যুৎ, পানি সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শাকসবজি, হাঁস-মুরগি পালন পালনের কোনো জায়গাও রাখা হয়নি।

নাওভাঙ্গা চরের উপহারের ঘর পেয়েছেন, শিল্পী বেগম (৫০)। মেয়েকে নিয়ে থাকেন। কাজকর্ম করে কোনো রকমে জীবন সংগ্রাম তার। তিনি বলেন, ফৌজদারিতে থাকতেন। সকালে শহরের উঠে কাজ করতেন। মেয়েটাকে লেখাপড়া করাতেন। জোর করে বসতভিটা ভেঙে এখানে পাঠিয়ে দেন। স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনু এ কাজে সহায়তা করেছেন। এখন খেয়ে না খেয়ে পড়ে থাকেন। চরের মধ্যে থেকে শহরের যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। এই জন্য কাজকর্মও পাই না। রাস্তা না থাকায় মেয়েটাও স্কুলে যেতে পারে না।সেখানে কথা হয় তাসলিমা আক্তারের সঙ্গে; তিনি বলেন, আমার স্বামী বিয়ে করে অন্য বৌ নিয়ে থাকেন। মেয়ের বিয়ে দিয়ে ছিলাম শেরপুর জেলায়। ২ সন্তান রেখে চলে গেছে। এক নাতি অসুস্থ চিকিৎসা করাতে পারছি না। তার দুঃখের গল্পের যেন শেষ নেই। তাসলিমা আরও বলেন, ‘এই ঘর দেয়ার সময় বলেছিল, আমাদের সাহায্য সহায়তা করা হবে। কই এখন তো কাউকে দেখি না। কেউ খোঁজ নিতেও আসেন না।’

সুমি বেগম বলেন, পানি নাই, রাস্তা নাই বিদ্যুৎ নাই। সন্ধ্যা হলেই একদিকে যেমন পৃথিবী অন্ধকার হয়। এখানে আমাদের জীবনও অন্ধকার হয়ে যায়। কোথায় বের হবার উপায় নাই। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুই মাইল হেঁটে পাথালিয়ার ছাতির মোড়ে রিকশা আনতে গেলে আরেক রিকশাওয়ালা নিষেধ করেন। এখন বলেন, হাসিনার উপহার আমাদের গলার কাঁটা হয়ে গেছে।

তবে এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদ জান্নাত পিংকি বলেন, ‘পরিদর্শনে গিয়ে মোটামুটি সেভেন্টিপার্সেন্ট মানুষ পেয়েছি। কয়েকটি ঘর খালি ছিল। তারা জানিয়েছে, এরা বাইরে কাজ করতে গিয়েছে। যেহেতু আমি দিনের বেলায় গিয়েছিলাম। যারা থাকেন না; তার মানে হচ্ছে এই ঘরে থাকার যোগ্যতা তার ছিলো না। এমনি এমনি নিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি ঘরে কার থাকার কথা কে বরাদ্দ নিয়েছে। সেই ব্যক্তি থাকছেন কিনা, কেন থাকছেন না। তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’জামালপুর পৌরসভার নাওভাঙ্গা চরে ৩ একর ৪০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত এই উপহারের ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/ এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ