ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ , ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্রসিংয়ে আটকে পড়ে ট্রাক ॥ বগি ফেলে ছুটল ইঞ্জিন ॥ ভুল সিগনালে বিপাকে যাত্রী

​রেলপথে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০৭:৩৪:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০৭:৩৪:৫১ অপরাহ্ন
​রেলপথে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা ​ফাইল ছবি
দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথে ঘটছে একের পর এক উদ্বেগজনক ঘটনা। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রেলক্রসিংয়ে আটকে পড়ে ট্রাক, নাটোরে বগি ফেলে ছুটে যায় ইঞ্জিন, কুমিল্লায় মাস্টারের ভুলে যাত্রী রেখে চলল ট্রেন। এইসব ঘটনা রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা আর দায়িত্বহীনতার জোরালো প্রমাণ। এসব ঘটনায় যাত্রীদের মাঝে বাড়ছে উৎকণ্ঠা, প্রশ্ন উঠছে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির বাস্তব অবস্থান নিয়ে। সোমবার (১৪ জুলাই) বাংলা স্কুপের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান- 
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সোনাখালি রেল ক্রসিংয়ে আটকে পড়া ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। এর পরে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ট্রাকটি রেল ক্রসিংয়ের কাছে গর্তে আটকে যায়। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে ওই ট্রাক উদ্ধারের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। 

এলাকাবাসী ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে কালিয়াকৈর-ধামরাই আঞ্চলিক রুটের সোনাখালি রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় রংপুর থেকে আসা ধামরাইগামী ধানবোঝাই একটি ট্রাকের চাকা গর্তে আটকে যায়৷ চালক স্থানীয়দের সহায়তায় চেষ্টা করেও ট্রাকটি সরাতে পারেনি। টানা বৃষ্টিতে রেলক্রসিংয়ের কাছে কয়েকটি বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গর্তেই ট্রাকটি আটকে যায়৷ পরে গাজীপুর থেকে র‌্যাকার এসে ট্রাকটি সরিয়ে নিলে তিন ঘণ্টা পর সকাল ১১টার দিকে উত্তরবঙ্গ -ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আবুল খায়ের চৌধুরী জানিয়েছেন, আটকে পড়া ট্রাকটি র‌্যাকার দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে। 

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি জানান- 
নাটোরের লালপুরের আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনের পেছন থেকে সব বগি খুলে গেছে।  সোমবার সকাল ১১টার দিকে লালপুরের আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনার ১৫ মিনিট পরে ইঞ্জিনটি এসে আবার খুলে যাওয়া বগি নিয়ে রাজশাহী অভিমুখে রওনা দেয়। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করার সময় ইঞ্জিন থেকে ট্রেনের সব বগি খুলে যায়। পরে ইঞ্জিন এসে আবার বগি নিয়ে রাজশাহী যাত্রা শুরু করে। 

প্রত্যক্ষদর্শী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করার সময় ইঞ্জিন থেকে বগি খুলে যায়। এ সময় ট্রেনের ইঞ্জিনটি বগি থেকে প্রায় ৪০০ গজ দূরে চলে যায়। ১৫ মিনিট পরে ইঞ্জিন ফিরে এসে আবার বগি নিয়ে রাজশাহীর দিকে যাত্রা শুরু করে। তবে আল্লাহর রহমতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।’ 

ট্রেনের যাত্রী আখি খাতুন বলেন, ‘আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করার সময় হঠাৎ বগি থেমে যায়। পরে দেখি বগি রেখে চলে গেছে ইঞ্জিন। ১৫ মিনিট পরে আবার ইঞ্জিন এসে বগি নিয়ে রাজশাহী যাত্রা শুরু করে। আল্লাহর কাছে লাখো কেটি শুকরিয়া যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।’ 

আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জীবন বইরাগী বলেন, সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন ভবন অতিক্রম করার সময় ইঞ্জিন পাটিং হয়ে যায়। পরে ওই ইঞ্জিন এসে বগি লাগিয়ে আবার রাজশাহী অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান- 
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের স্টেশন মাস্টারের ভুলে যাত্রী রেখে ট্রেন চলে যায় অন্য স্টেশনে। এতে করে শত শত ট্রেন যাত্রী দুর্ভোগ পড়েন। এ ঘটনায় স্টেশন মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশন এ ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার রাত ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নাঙ্গলকোট স্টেশনে থেমে সিডিউল মোতাবেক যাত্রী উঠানামা করানোর কথা। কিন্তু রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ট্রেনটি স্টেশনে না থেমে মাস্টারের ভুল সিগনালের কারণে যাত্রী উঠানামা না করেই চলে যায়। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন শত শত যাত্রী। একপর্যায়ে স্টেশন মাস্টারকে ঘেরাও করে যাত্রীরা প্রতিবাদ করেন। পরে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি নাঙ্গলকোট স্টেশনে থামিয়ে চট্টগ্রামের যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার রুপন চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমি লাকসাম কেবিনে দায়িত্বরত মাস্টারকে বলেছি, ট্রেন চালানোর জন্য। তিনি ৮০২ চট্টলার স্থলে ৭০২ সুবর্ণ এক্সপ্রেস মনে করেন, ফলে চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেন নাঙ্গলকোটে থামেনি। কেবিন মাস্টারের বলার ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’ লাকসাম রেলওয়ের কেবিন মাস্টার শিমুল মজুমদার বলেন, ‘আমি ৮০২ চট্টলা ট্রেনের কাগজ লিখে দিয়েছি। ৭০২ সুবর্ণ ট্রেনের নাম আমি লিখিনি। আমরা দু’জন মাস্টার ভুল করতে পারি। কিন্তু ট্রেনের ড্রাইভার ভুল করতে পারে না। সে তো স্টপেজ দিতে পারত। ট্রেনের গার্ড তো ভুল করতে পাারে না, সেও ব্রেক করতে পারত।’ 

কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, দায়িত্ব অবহেলার কারণে নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারকে প্রাথমিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ