ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ , ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​এখনো পানিবন্দি লাখো মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০২:৪২:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০২:৪২:৪৯ অপরাহ্ন
​এখনো পানিবন্দি লাখো মানুষ ​ছবি: সংগৃহীত
নোয়াখালীর আকাশ আজ সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন। সূর্যের দেখা নেই, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে তটস্থ পুরো জেলা। কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে জেলার ছয়টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল এখনো পানির নিচে। জলাবদ্ধতা ও বন্যায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।

জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নোয়াখালীর ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। বিশেষ করে বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও সদর উপজেলার শতাধিক গ্রাম এখনো ডুবে আছে। বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। রান্নার উপকরণ, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ৩৪ হাজার ৯৫০টি পরিবার। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার ৪০৩ জন। এছাড়া সেনবাগ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭টি বসতঘর এবং সুবর্ণচরে একটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলা শহরের আশপাশ ও বিভিন্ন এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে আছে। অনেক বাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে আছে। ফলে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক পানি নেমে গেছে। আজ সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পানিবন্দি বাসিন্দারা আতঙ্কিত। জলাবদ্ধতায় মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরেও কেউ নিরাপদ জায়গা পাচ্ছেন না। ঘর, রান্নাঘর, পুকুর-সব পানির নিচে। অনেকেই ভেঙে পড়া ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রোদ উঠলেও দুর্ভোগ কমেনি। বরং অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

সুবর্ণচরের বাসিন্দা কৃষক নুরুল হক বলেন, ধানের জমিগুলা পানিতে তলাই গেছে। বাড়ির ভেতরও কোমর সমান পানি। এখন যদি আবার বৃষ্টি হয়, তাইলে সর্বনাশ। জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম  বলেন, যেহেতু এখন বর্ষাকাল, তাই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এটি সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, জেলার ছয়টি উপজেলায় ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ২৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছে ১০৭টি গবাদিপশুও। দুর্গতদের চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে ৫১টি মেডিকেল টিম, যার মধ্যে ২৯টি ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, নোয়াখালীতে ৭,২৬০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৪০ হাজার মৎস্য খামারির মাছের ঘের ভেসে গেছে। আমরা ৯৮৪ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬ মেট্রিক টন চাল ও ৬ লাখ টাকা বিতরণ করেছি। আরও ১,৮২০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৪৮৪ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। আমাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

 
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ