ঢাকা , রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ , ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​আনারসে ভরপুর হাটবাজার

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ০৩:৫৭:২৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ০৭:৫৫:২৭ অপরাহ্ন
​আনারসে ভরপুর হাটবাজার ​ছবি: সংগৃহীত
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা আনারসের ‘রাজধানী’ হিসেবে খ্যাত। এ উপজেলায় প্রচুর আনারস আবাদ হয়। মধুপুরগড়ের আওতায় উপজেলা ঘাটাইল ও সখীপুরেও প্রচুর আনারসের আবাদ হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলে নিয়মিত চাষ করা আনারস বাজারে এসেছে। রসালো আনারসে ভরপুর এখন আনারসের হাটবাজার। 

আগে মূলত জায়ান্টকিউ জাতের আনারস আবাদ হতো মধুপুর গড়ের পাহাড়িয়া অঞ্চলে। জায়ান্টকিউ আকারে বড়। তারপর ধীরে ধীরে অন্য জাতের আনারসও আবাদ হতে থাকে। জলডুগি ও ফিলিপাইনের উন্নত ‘এমডি টু’ জাতের আনারস আবাদ হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের আনারস জলডুগি বা হানি কুইন। জলডুগি খেতে মিষ্টি তবে আকারে ছোট। মধুপুরে আনারস চাষিরা জানান, এখন আনারসের ভরা মৌসুম চলছে। মধুপুরের গারোবাজার আনারসের বড় বাজার। আগে প্রতি সপ্তাহে দুদিন আনারসের বাজার হলেও ভরা মৌসুমে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ বাজারে আনারস বেচাকেনা চলে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোর হওয়ার আগেই কৃষক ক্ষেতে গিয়ে পাকা আনারস কাটতে শুরু করেন। তারপর সেগুলো ঝুড়িতে ভরে সাইকেলে, কেউ ভ্যানে, কেউ ইজিবাইকে তুলে গারোবাজার নামকস্থানে আনারসের হাটে নিয়ে ওঠাচ্ছেন। স্থানীয় ও অন্য এলাকা থেকে খুচরা বিক্রেতা আনারস নিয়ে এসেছেন। এসেছেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারাও। তারা দামাদামি করে কিনছেন আনারস। সেই আনারস বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

আনারস চাষি ও বিক্রেতারা জানান, ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গারোবাজার এবং মধুপুরের জলছত্র আনারস ক্রয়-বিক্রয়ের বড় হাট। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বাজারেও আনারস বিক্রি হয়ে থাকে। আগে প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার গারোবাজার বসতো আনারসের হাট। এখন আনারসের ভরা মৌসুম হওয়ায় প্রতিদিনই এ হাট বসছে। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আনারস ক্রয়ের জন্য আসেন। চাষিরা আনারস নিয়ে হাটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান। পাইকাররা তাদের কাছ থেকে আনারস ক্রয় করে নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপ করে রাখেন। পরে তা ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা আনারস ক্রয় করে অটোরিকশা ও ছোট পিকআপযোগে যার যার গন্তব্যে নিয়ে যান।

গারোবাজার হাটে কথা হয় কজন আনারস চাষির সঙ্গে। তাদের একজন মহিষমারা গ্রামের আজিজুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি সাড়ে তিনশ শতাংশ জমিতে আনারস চাষ করেছেন। দুই মাস আগে থেকে তার বাগানে আনারস পাকতে শুরু করে। এখন আনারসের ভরা মৌসুম। মধুপুর বাজারে ছোট আকারের আনারস ১৫ থেকে ২০ টাকায় আর বড় আনারস ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে মধুপুরের বাইরে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিপণনের কারণে দাম কম-বেশি হয়ে থাকে। একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ৩৭০ শতাংশ জমিতে আনারস আবাদ করেছেন। এবার মৌসুমের শুরুতেই ভালো দাম পাচ্ছেন।

মধুপরের গারোবাজারে আনারসের পাইকারি ক্রেতা শাহীন আলম জানান, গারোবাজারের আনারস তিনি ঢাকায় সরবরাহ করে থাকেন। আরেক পাইকার উজ্জ্বল সরকার জানান, আগে সিন্ডিকেট ছিল। বাজারে ও পথে চাঁদা দিতে হতো। এখন সেই সিন্ডিকেট খুব একটা নেই।

কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি মধুপুরে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্মাণের। সরকারি-বেসরকারিভাবে এখনও নির্মাণ করা হয়নি এ কারখানা। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা আনারসসহ অন্যান্য ফল আবাদ করে শুধু সংরক্ষণ করতে না পেরে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সমস্যার দ্রুতই সমাধান চান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে গত বছর ৭ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ করা হয়। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ করা হয়েছে। এ বছর দুই লাখ ৮৭ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন ফল আসবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, আনারস আবাদের জন্য পাহাড়ি এলাকা খুবই উপযোগী। এবার আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা দাম ভালো পাচ্ছেন। প্রতিটি আনারস পাইকারি হিসেবে ৩২ টাকা থেকে ৩৫ টাকা আর ভোক্তা পর্যায়ে আকারভেদে সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় আনারস বিক্রি করা যাচ্ছে।


বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ