ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ , ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শূন্য আয় দেখিয়ে কর ফাঁকির চেষ্টা, আশঙ্কা অর্থ উপদেষ্টার

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ০৫:০৩:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ০৫:০৪:৫৬ অপরাহ্ন
শূন্য আয় দেখিয়ে কর ফাঁকির চেষ্টা, আশঙ্কা অর্থ উপদেষ্টার ​ছবি: সংগৃহীত
দেশে কর রিটার্ন জমাদানকারীদের একটি বড় অংশ শূন্য আয় দেখিয়ে কর ফাঁকির চেষ্টা করছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর মতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী প্রতি ১০০ জন রিটার্ন দাতার মধ্যে ৭০ জনই শূন্য ট্যাক্স দেখান, যা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ ধরনের রিটার্ন খতিয়ে দেখা এবং কার্যকর অডিট পরিচালনার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

বুধবার (০৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অডিট অ্যান্ড একাউন্টিং সামিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এনবিআরের মতে প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনই শূন্য ট্যাক্স দেখান। এই তথ্য সত্যি হলে বিষয়টি উদ্বেগজনক। যারা এই ৭০ শতাংশ শূন্য রিটার্ন দিচ্ছেন, তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিত। সঠিকভাবে অডিট না হলে রাজস্ব আদায়ে মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হবে।”

তিনি বলেন, “অডিটিং ও একাউন্টিং খাত শুধু কাগজে-কলমে ঠিক থাকলেই হবে না। যারা অডিট করেন, তাদের সততা ও অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান কেবল নিয়ম রক্ষা করতে মানহীন রিপোর্ট জমা দেয়, যা দেশের আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য বিপজ্জনক।”

গভর্নর ও বর্তমানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “দেশের অধিকাংশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে গরমিল রয়েছে। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর করা হবে। স্বচ্ছ অডিট ছাড়া দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জন সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানে অডিট করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না। যেসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মো. মোমেন বলেন, “বর্তমানে যদি শুধু অডিট রিপোর্ট দেখে প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে স্বচ্ছ অডিটর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিছু অডিট ফার্ম রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সুবিধা দিতে মিথ্যা রিপোর্ট তৈরি করছে। আইএফআইসি ব্যাংকে একটি কাগুজে কোম্পানিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে অর্থ নেওয়া হয়েছে। এই অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এখনো শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।”

তিনি বলেন, “গত এক যুগে ব্যাংক খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। অডিট রিপোর্ট গোপন রেখে যেসব শীর্ষ অডিট ফার্ম দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করেছে, তাদের নাম চিহ্নিত হলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আর্থিক প্রতিবেদন কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকর অডিটিং নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আন্তর্জাতিক চাপ নয়, সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও এই খাতে সংস্কার জরুরি।
 
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এইচবি/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ