ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ , ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​ফেনীতে বন্যা: ৩৫ গ্রাম প্লাবিত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ০৩:৪২:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ০৩:৪২:১৯ অপরাহ্ন
​ফেনীতে বন্যা: ৩৫ গ্রাম প্লাবিত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ​সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
ফেনীতে টানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ফেনী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, প্লাবিত এলাকার অনেক বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার ও সাব-স্টেশন পানিতে ডুবে যাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৭ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মুহুরী নদীর পরশুরাম গেজ স্টেশনে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ৬টায় পানির স্তর ছিল ৬.৯৭ মিটার, যা রাত ৮টায় বেড়ে ১৩.৮৫ মিটারে দাঁড়ায়। বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার হওয়ায়, পানি প্রায় ৭ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ-ভারত টাই বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পরশুরাম উপজেলায় ১০টি এবং ফুলগাজী উপজেলায় ৫টিসহ মোট ১৫টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে পরশুরামের জঙ্গলগোনা (২টি), উত্তর শালধর (১টি), নোয়াপুর (১টি), পশ্চিম অলকা (১টি), ডি এম সাহেবনগর (১টি), পশ্চিম গদানগর (১টি), দক্ষিণ বেড়াবাড়িয়া (১টি), পূর্ব সাতকুচিয়া (১টি), উত্তর টেটেশ্বর (১টি) উল্লেখযোগ্য। ফুলগাজীতে দেড়পাড়া (২টি), শ্রীপুর (১টি), উত্তর দৌলতপুর (১টি), কমুয়া (১টি) সহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া বন্যা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি উপচে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে এবং সবশেষ সকাল ৯টায় পানির স্তর ১৩.৩১ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি মঙ্গলবার রাত ১২টায় বিপদসীমার ১.৫৭ মিটার ওপর দিয়ে (১৩.৯২ মিটার) প্রবাহিত হচ্ছিল। মাত্র ১৫ ঘণ্টায় নদীর পানি ৬.৯২ মিটার (২২ ফুট ১০ ইঞ্চি) বেড়েছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ফেনীতে ৪৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, বুধবার ও বৃহস্পতিবারও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

পরশুরামের ইউএনও আরিফুর রহমান জানান, মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে। নতুন এলাকা প্লাবিত হলেও এখনও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না।

ফুলগাজীর ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম জানান, তিনটি নদীর বাঁধে চারটি ভাঙন নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ উপজেলার সব উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন সতর্ক করে বলেছেন, উজানে ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানির স্তর আরও বাড়তে পারে এবং নতুন বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফুলগাজী ও পরশুরামে ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং প্রায় ১৫০ জন সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গতদের জন্য ৬.৫ লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ফেনী সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ এবং ১২০ মেট্রিক টন চাল উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবারও বরাদ্দ করা হয়েছে।

ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলায় যথাক্রমে ৯৯, ৩২ এবং ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় গ্রহণকারীদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ২,৫৪৭ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

এছাড়াও, জেলা/উপজেলা/ইউনিয়নের সকল সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র (কম্পিউটার/ল্যাপটপ/প্রিন্টার) এবং প্রয়োজনীয় নথি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এইচবি/এসকে

​ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ১৫৩ আশ্রয়কেন্দ্র


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ