ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ , ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​ফলজ গাছের সঙ্গে নির্মম শত্রুতা!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ০১:৪৮:০৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ০১:৪৮:০৪ অপরাহ্ন
​ফলজ গাছের সঙ্গে নির্মম শত্রুতা! ​ছবি: সংগৃহীত
ঝিনাইদহ সদরের সোনারদাইড় গ্রামে দিনের বেলায় কৃষকের ১৫০টি ফলসহ মাল্টা ও পেয়ারা গাছ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) উপজেলার সোনারদাইড় গ্রামের মাঠে বিপুল হোসেন (৩৮) নামে এক কৃষকের বাগানের এসব গাছ কাটা হয়। মো. আবু হানিফ নামে এক সেনা সদস্য এসব গাছ কেটেছেন বলে অভিযোগ কৃষকের। এতে প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষক বিপুল হোসেন। এ ঘটনায় তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিপুল হোসেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের সোনারদাইড় গ্রামের মো. সামছুল মণ্ডলের ছেলে। সেনা সদস্য আবু হানিফ একই এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে।

জানা যায়, বিপুল হোসেন পেশায় ইজিবাইক চালক। গ্রামের প্রতিবেশী মোশারেফ ও তার মা ফাতেমার কাছ থেকে ৫০ শতক জমি ৫ বছরের জন্য লিজ নেন তিনি। লিজ বাবদ প্রতি বছর ২৫ হাজার টাকা করে ৫ বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। এছাড়াও ওই জমিতে গাছ থাকায় ৩৫ হাজার ও তারের বেড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা প্রদানের চুক্তি হয়। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় জমির মালিক মোশাররফ হোসেন ও তার মায়ের সঙ্গে ৫ বছরের জন্য চুক্তি করেন কৃষক বিপুল হোসেন। চুক্তি অনুযায়ী অগ্রিম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মোশারেফ ও তার মা ফাতেমার হাতে দেওয়া হয়।

কিন্তু পাঁচ বছর পূর্ণ না হতেই তিন বছরের মাথায় মোশারেফের ভাই সেনা সদস্য আবু হানিফ ওই জমি দখল নিতে গেলে বিপুল চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। পরে সেনা সদস্য আবু হানিফ থানায় অভিযোগ করলে, পুলিশ উভয়পক্ষকে ডেকে সালিশে বসেন। সালিশে ওই জমির চুক্তি শেষ না হলেও মাল্টা ফল বিক্রয় করে জমি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দুজন শ্রমিক, সেনা সদস্য আবু হানিফ ও তার স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনসহ ফলসহ মাল্টা গাছগুলো কেটে দেন।

বিপুল হোসেনের ভাতিজা সম্রাট মিয়া বলেন, দুপুরে মাঠে ঘাস কাটতে আসি। এরপর চাচার বাগান থেকে গাছ কাটার শব্দ শুনতে পাই। পরে বাগানের দিকে গিয়ে দেখি হানিফ, তার স্ত্রী, শালীসহ বেশ কয়েকজন লোক মিলে মাল্টা গাছ কাটছে। আমি গাছ কাটতে নিষেধ করতে গেলে আমাকে দা দেখিয়ে মারতে আসে। পরে বাড়িতে গিয়ে চাচাকে ঘটনাটি জানাই।

মাল্টাচাষি বিপুল হোসেন বলেন, ‘আমি ৫ বছরের জন্য এই জমি লিজ নিয়েছি। চুক্তি অনুযায়ী এখন ৩ বছর চলমান। সামনে এখনো দুই বছর চুক্তির মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে হানিফ ওই জমি ছেড়ে দিতে বারবার হুমকি দিয়ে আসছে। ১ মাস আগে ওই জমি জবরদখল করতে আসে। আমার নামে থানায় অভিযোগ দেয়। সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দেয়। সেনাবাহিনী এবং পুলিশ উভয় পক্ষকে ডাকে। আমি তাদের কাছে আমার চুক্তির কাগজ দেখাই। তখন সবাই সিদ্ধান্তে নেয়, গাছে যেহেতু মাল্টা আছে, এজন্য মাল্টাগুলো বিক্রয় শেষে দুই বছর আগেই জমি ফেরত দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাদের সিদ্ধান্তে রাজি ছিলাম। আমিও চেয়েছিলাম যেহেতু গাছে প্রচুর পরিমাণে মাল্টা আছে। মাল্টাগুলো বিক্রয় করে জমিটা ছেড়ে দেবো। কিন্তু হঠাৎ হানিফ তার স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে করে নিয়ে আমার ধরন্ত মাল্টা গাছ কেটে দিয়েছে। বাগানে এক একটি গাছে ৫০ থেকে ৬০ কেজির বেশি মাল্টা ধরেছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী ৫০ শতক জমিতে ৫ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে সেনা সদস্য মো. আবু হানিফ বলেন, ‘এই জমি লিজের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। এটা আমার জমি, আমার ভাই মোশারফ বিপুলের কাছে লিজ দিয়েছে। বিষয়টি জানার পর তাকে ডেকে বলি তুমি গরিব মানুষ তোমাকে ক্ষতি করতে চাচ্ছি না। তুমি তোমার মতো করে জমি থেকে সরে যাও। তারপরও দখল ছাড়েনি। এ কারণে গাছগুলো কেটে দিয়েছি।’

হলিধানী ইউনিয়নের সোনারদাইড় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জমিটা পাশের গ্রামের আলি হোসেনের। তিনি মারা যাওয়ার পর উত্তরসূরি হিসেবে ছেলে আবু হানিফ মালিক হন। হানিফ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। সে চাকরি করা অবস্থায় তার ভাই মোশারেফ, বোন জামাই ও মা সবাই মিলে আমাদের গ্রামের বিপুলের কাছে ৫ বছরের জন্য লিজ দেয়। বাবা মারা যাবার পর হানিফ যখন মালিক হয় তখন বিপুলকে বলে, এই জমি লিজ দিয়েছে আমার মা, আমি মানি না। জমি ফেরত দিতে হবে। তখন বিপুল বলে, যদি আপনারা না দেন, আমাকে একটু সুযোগ দেন আমি যেন মাল্টাগুলো উঠাতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাঝে একটা ঝামেলা হলে বিপুল হোসেন ঝিনাইদহ সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগ করে। সেখান থেকে উভয় পক্ষকে ডাকে। সেনা সদস্য আবু হানিফ তার মায়ের সিদ্ধান্ত না মানায় সালিশ থেকে সিদ্ধান্ত হয় মাল্টা বিক্রয় করা পর্যন্ত বিপুল হোসেন এই জমি চাষ করতে পারবে। সেই অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে গাছের মাল্টাগুলো বাজারে বিক্রয় উপযোগী হয়ে যেতো, জমিটাও ছেড়ে দিত। কিন্তু একজন সেনা সদস্য হয়ে কৃষকের ধরন্ত ফলের গাছ কেটে দিয়েছে।’

খবর পেয়ে কাতলামারী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘ধরন্ত মাল্টা ও পেয়ারা গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। সব ভিডিও করে নিয়েছি ওসি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইন সবার জন্য সমান। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ