মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে চালের দাম, সবজির বাজারে অস্বস্তি
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৪-০৭-২০২৫ ০৩:২২:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৪-০৭-২০২৫ ০৫:২৫:৩৫ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
কোরবানির ঈদের পর থেকে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এরপর সবজির দামও বেড়েছে গেলো সপ্তাহ থেকে। সব মিলিয়ে চড়া দামে চাল আর সবজি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এদিকে, মুরগি ও ডিমের বাজারদর কিছুটা কম। এতে ক্রেতারা স্বস্তিতে থাকলেও খামারিদের জন্য লোকসান হচ্ছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে সব ধরনের সবজির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম। বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার ওপরে। দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়, প্রতি কেজি চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, ধন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে সবজির দাম গেল কিছুদিন যাবত বেড়ে গেছে। আজও বাড়তি দামে সবজি কিনলাম। কম দাম থাকতে থাকতে হঠাৎ করে কেন সব ধরনের সবজির দাম এতটা বেড়ে গেল বুঝতে পারছি না। তবুও বাধ্য হয়ে ১ কেজি, আধা কেজি করে কিছু সবজি কিনলাম। কিছুদিন আগেও সবজির দাম কম ছিল, কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে বলতে গেলে সবজি দাম বাড়তি যাচ্ছে। সবজির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা রাজু আহমেদ বলেন, বেশ কিছু সবজির মৌসুম এখন প্রায় শেষ। যেসব সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে সেগুলোর দাম বেড়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে এসব সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে সবজি গুলোর দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের সবজি উঠার আগ পর্যন্ত কিছুটা বাড়তি থাকবে।
রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, সবধরনের সবজি আগের চেয়ে বাড়তি দামে আমাদের পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে এখন এসব সবজির সরবরাহ কম এ কারণেই বাজারের দাম বেড়েছে। সবজির দাম বাড়ার পাশাপাশি আমাদের বিক্রির পরিমাণও কমে গেছে। আগে যেই ক্রেতা ১ কেজি সবজি কিনতো, এখন সেই ক্রেতাই আধা কেজি সবজি কিনে ফলে আমাদের বিক্রির পরিমাণ কমেছে। আগে যেখানে এক আইটেম সবজি ১০ কেজি ২০ কেজি করে আনতাম, দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন সেই সবজিই আমরা পাঁচ কেজি ৭ কেজি করে আনছি। তবে নতুন করে সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির দাম কমে আসবে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। সেখানে চালকল মালিকরা ঈদের পর কারবার চাঙা হওয়ার সঙ্গে দাম বাড়িয়েছেন, যে কারণে চালের দাম বেশি এখন। ঈদের পর প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যে কারণে ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতিকেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে। মালিবাগের চাল বিক্রেতা আল্লাহর দান স্টোরের আবুল হোসেন বলেন, নাজিরশাইল ছাড়া পাইজাম, বিআর-২৮, মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৬৮ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে যে মিনিকেট চাল কিনতাম, গতকাল কিনেছি ৭৬ টাকা কেজি দরে। এদিকে, ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চালই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে।
ঢাকার বাজারে ঈদের পর থেকে নিম্নমুখী ছিল মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমেছে ১২০ টাকায়। বড় বড় বাজারে কিনলে ১১৫ টাকায়ও কেনা যাচ্ছে। তবে এ দাম ডিম উৎপাদনকারীর জন্য লোকসানের বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিপুল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, অন্তত ১৪০ টাকা ডজন ডিমের দাম হলে খামারিদের কিছু লাভ হয়, এবার দাম খুব কমে তাদের লোকসান হচ্ছে। এদিকে এরমধ্যে মুদি পণ্যগুলো দাম তেমন হেরফের হয়নি। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ অন্য নিত্যপণ্যও।
বাংলাস্কুপ/ প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স