ঢাকা , রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে ক্যাপাসিটি চার্জ কমছে

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০২:০৯:০৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০৩:০৪:১০ অপরাহ্ন
​বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে ক্যাপাসিটি চার্জ কমছে ​ছবি: সংগৃহীত
বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা বিদ্যুৎ চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার চাইছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিশেষ করে আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ বা পেমেন্ট বাদ দিতে। বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির এই ধারার কারণে প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি অর্থ দিতে হচ্ছে সরকারকে। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ একেবারে বাদ না দিয়ে তা কমিয়ে আনা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক, তাদের উৎপাদন ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদান করা। এটি মূলত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য একটি নিয়মিত পেমেন্ট, যা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য দেওয়া হয়। এই ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা ক্যাপাসিটি চার্জ সাধারণত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বা অন্য কোনো বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিকে দেওয়া হয়ে থাকে।

জানা গেছে, গ্যাস বা তরল জ্বালানিভিত্তিক এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার কেন্দ্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বছরে ১২০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বার্ষিক ২৪০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সহনীয় রাখতে এই টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। যা বাংলাদেশের মত একটি দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অভিযোগ রয়েছে, কেবলমাত্র লুটপাট ও পছন্দের মানুষদের পকেট ভারী করার সুযোগ দিতেই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে করা বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তিগুলোতে ক্যাপাসিটি চার্জের ধারা রাখা হয়েছিল।

গণঅভুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার। উদ্যোগ নেয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কারের। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আইপিপি ও যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি বর্তমানে বিদ্যমান পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) পরীক্ষা করছে, যাতে এ ধরনের চার্জ থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আর্থিক বোঝা কমানোর উপায় খুঁজে বের করা যায়। 
এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফজলুল কবির খানের নেতৃত্বে সব পিপিএ পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে স্বেচ্ছায় তাদের পিপিএ পুনর্বিবেচনা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ, বিদ্যুতের মূল্যের স্বচ্ছতার জন্য পিপিএর অসংগতিগুলো সংশোধন করা আব্যশক। 

সর্বশেষ, গত শুক্রবার (২৭ জুন) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, সরকার আইপিপিদের সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনা করছে, যাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ধারা বাদ দেওয়া যায়। যা দীর্ঘকাল ধরে প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করেছে।
জানা  গেছে, বিপিডিবি প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ১২ টাকায় কিনে ৮ টাকা ৯৫ পয়সায় বিক্রি করে। ফলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় তিন টাকা পাঁচ পয়সা লোকসান দিতে হচ্ছে, যা ভর্তুকির মাধ্যমে মেটানো হয়। 

বিপিডিবি সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমানে গ্যাস ও তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট প্রতি কিলোওয়াট প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ মার্কিন ডলার এবং কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর জন্য প্রতি কিলোওয়াট প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ মার্কিন ডলার। সম্প্রতি সফররত আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, গ্যাস বা তরল জ্বালানিভিত্তিক এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার কেন্দ্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বছরে ১২০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বার্ষিক ২৪০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এগুলো সরকারের ভর্তুকির হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, যা কমানোর সুযোগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম রোববার (২৯ জুন) বাংলা স্কুপকে বলেন, বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তিগুলোতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ধারা নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি। সেই সঙ্গে আমাদের বোর্ড কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরাও কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমরা ক্যাপাসিটি চার্জ কমিয়ে আনতে কাজ করছি। কমিয়ে আনতে পারলেই বিদ্যুতের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। প্রকৌশলী রেজাউল করিম আরো বলেন, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ সচিবের দিকনির্দেশনায় কাজ খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, আগামী দু'এক মাসের মধ্যে এর একটা ভালো ফলাফল আপনারা দেখতে পাবেন।

বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ