এনবিআরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ : প্রতিদিন ক্ষতি ২৫০০ কোটি টাকা
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৯-০৬-২০২৫ ১২:০৯:৩৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৯-০৬-২০২৫ ০২:১৩:৫০ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রবিবারও দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এর ফলে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম, স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের কনটেইনার ডেলিভারি, মূল্যায়ন ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স। ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আদায় এবং দেশের বাণিজ্যিক প্রবাহ।
চট্টগ্রাম, মোংলা, বেনাপোলসহ দেশের সব বন্দরে কাস্টমস হাউস ও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলোতে শনিবারের মতো আজও কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন বলে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ থেকে জানানো হয়েছে। পরিষদের আহ্বায়করা জানিয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে কোনও কার্যকর সাড়া না আসায় ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও পূর্ণ শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বাণিজ্যে স্থবিরতা, শিল্পে ধসের শঙ্কা
ব্যবসায়ী নেতারা সতর্ক করেছেন, টানা শাটডাউন চলতে থাকলে দেশের রফতানি শিল্প ধসের মুখে পড়বে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র রফতানিকারকরা দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।’চট্টগ্রাম বন্দরে ইতোমধ্যেই কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (শনিবার) একটিও রফতানি কনটেইনার বন্দরে ঢোকেনি। ইউটিলিটি পারমিশন (ইউপি), রফতানি বিল দাখিল, চালান অনুমোদনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ট্রাকগুলো ডিপোর বাইরে আটকে রয়েছে।
রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি, চেয়ারম্যান অপসারণের দাবি
শনিবার এনবিআর ভবনের সামনে অবস্থান নেয় শতাধিক কর্মকর্তা। ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির আওতায় তারা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণসহ একাধিক দাবিতে স্লোগান দেন। আজও তারা একইভাবে রাজস্ব ভবনের সামনে অবস্থান করবেন বলে জানানো হয়েছে।এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ‘আমরা এনবিআরের বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছি। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।’
ব্যবসায়ী মহলের উদ্বেগ
মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিসিআই, বিজিএপিএমইএ, লেদার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, আইসিসি বাংলাদেশ, এফবিসিসিআইসহ অন্তত ১২টি ব্যবসায়ী সংগঠন একযোগে এনবিআরের অচলাবস্থার বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘আমাদের শীতকালীন রফতানির অর্ডারগুলো ঝুঁকির মুখে। বায়াররা অন্য দেশে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এই অচলাবস্থা দেশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’বাংলাদেশ লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আমরা বুঝি এনবিআর কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কিন্তু এভাবে পুরো অর্থনীতিকে জিম্মি করা সমাধান নয়। সরকারের উচিত দ্রুত আলোচনায় বসা।’
সংকটের মূল: প্রশাসন ক্যাডার বনাম এনবিআর ক্যাডার
১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অধ্যাদেশে এনবিআর ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়। এতে দুই বিভাগের প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সরকার যাকে উপযুক্ত মনে করবে’—এই কথার মারপ্যাঁচে এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি, প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য কায়েমের পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছিলাম—দুই বিভাগের প্রধান হবেন এনবিআর থেকেই। কিন্তু অধ্যাদেশে সে জায়গা থেকে সরে আসা হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের ভীষণভাবে হতাশ করেছে।’টানা শাটডাউনে সরকার যেমন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি রফতানির বিলম্বে ভেঙে পড়ছে শিল্প ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি-রফতানির অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ সমস্ত সামষ্টিক অর্থনীতি মারাত্মক চাপে পড়বে।
বাংলাস্কুপ/ প্রতিবেদক/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স