ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫ , ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি

তেল নিয়ে দুশ্চিন্তা কেটেছে বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ১২:১৮:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ০১:২৮:২৪ অপরাহ্ন
তেল নিয়ে দুশ্চিন্তা কেটেছে বাংলাদেশের
টানা ১৩ দিন পাল্টাপাল্টি হামলার পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলো ইরান ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত হামলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশ। এর ফলে দুই দেশের মানুষের মাঝে যেমন স্বস্তি ফিরেছে তেমনি বাংলাদেশে জ্বালানি তেল পরিবহনে দুশ্চিন্তা কেটেছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল-ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চলা অবস্থায় ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর হরমুজ প্রণালি থেকে তেল পরিবহনের জাহাজ ফিরেও গিয়েছিল। তেলের দাম বাড়ার কথা নিয়েও আলোচনা চলছিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল পরিবহনে দুঃশ্চিন্তা দেখা দেয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা বেশিরভাগ তেলবাহী জাহাজ এই পথে দেশে আসে। সবশেষ দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় ওই প্রণালি দিয়ে তেল পরিবহনে কোনও সমস্যা হবে না। সেইসঙ্গে দাম বাড়ার শঙ্কাও কিছুটা কেটে গেছে।

বিপিসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশে তিন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি হয়। এর মধ্যে রয়েছে তেল, এলএনজি ও এলপিজি। যার প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্য। বছরে প্রায় ৫৫ লাখ টন তেল আমদানি হয়। তার ৪০ লাখ টন আমদানি হয় পরিশোধিত তেল। এগুলো ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে আসে। বাকি ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আসে আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে। এ ছাড়া দুটি ভাসমান টার্মিনালে ১১০০ মিলিয়ন ধারণক্ষমতার এলএনজি আমদানি হয় কাতার এবং ওমান থেকে। পাশাপাশি বছরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টন এলপিজি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি পরিবহনের মূল পথ হরমুজ প্রণালি। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে অনেক দেশের মতো উদ্বেগে ফেলেছে বাংলাদেশকেও। যদিও মজুত এবং সরবরাহ ব্যবস্থা এখনও ঠিক থাকায় বিপিসি কিছুটা ভারমুক্ত ছিল। তবে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশকেও নাজুক পরিস্থিতিতে পড়তে হতো বলে জানিয়েছেন বিপিসির কর্মকর্তারা।  

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে জ্বালানি তেলের কোনও সংকট নেই। সরবরাহও স্বাভাবিক আছে। ২৫ জুন দুটি জাহাজে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। দুটি জাহাজের মধ্যে একটিতে দুই হাজার মেট্রিক টন অকটেন আছে। বাকিগুলো ডিজেল। এরপর তেলবাহী আরও সাতটি জাহাজ দেশে পৌঁছাবে শিগগিরই। নয়টি জাহাজে মোট দুই লাখ ৪২ হাজার টন জ্বালানি তেল দেশে আসবে।’

হরমুজ প্রণালি বন্ধের ঘোষণায় তেল পরিবহনে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছিল সবাই, তবে যুদ্ধবিরতিতে ইরান ও ইসরায়েল সম্মত হওয়ায় তা কেটে গেছে বলেও জানান জাহিদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‌‘যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলে হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে কোনও সমস্যা হবে না। স্বাভাবিক নিয়মে জ্বালানি পরিবহন হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি কোনও কারণে মধ্যপ্রাচ্যের এই রুট দিয়ে তেলবাহী জাহাজ না আসে, তাহলে বিকল্প হবে দক্ষিণ এশিয়া। ওসব এলাকায় যারা তেল রফতানির সঙ্গে কাজ করে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা বলেছেন সেক্ষেত্রে তারা আমাদের জ্বালানি সরবরাহ করতে পারবেন। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ইতি টানলে স্বাভাবিক নিয়মেই আসবে জ্বালানি তেল।’

বিপিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিপিসির সর্বোচ্চ জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা আছে ১৪ লাখ মেট্রিক টনের মতো। যা দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বর্তমান অকটেন মজুত আছে ১২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন, যা দিয়ে চলবে ১২ দিন। পেট্রোল মজুত আছে ১৬ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন, যা দিয়ে চলবে ১২ দিন। ফার্নেস তেলের মজুত আছে ৫১ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে চলবে ২৯ দিন। ডিজেল মজুত আছে তিন লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে চলবে ৩২ দিন এবং উড়োজাহাজে ব‍্যবহৃত জ্বালানি তেলের (জেট ফুয়েল) মজুত আছে ৫১ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে চলবে এক মাস। তবে কয়েকদিনের মধ্যে দেশে পৌঁছার অপেক্ষায় আছে তেলবাহী নয়টি জাহাজ। যেখানে আমদানি হচ্ছে দুই লাখ ৪২ হাজার টন। এর মধ্যে রয়েছে অকটেন ২৭ হাজার মেট্রিক টন, ডিজেল এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, ফার্নেস তেল ২৫ হাজার মেট্রিক টন ও জেট ফুয়েল রয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ