ঢাকা , বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ , ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেই এসি-ফ্যান তবু প্রাণ জুড়ানো শীতলতা

​কারখানা নয়, এ যেন সবুজের পাহাড়!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৪-০৬-২০২৫ ০৩:১২:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৪-০৬-২০২৫ ০৪:৩৭:৪০ অপরাহ্ন
​কারখানা নয়, এ যেন সবুজের পাহাড়! ফাইল ছবি
দূর থেকে মনে হয়, গাছ, লতাপাতা ও ফুলে আচ্ছাদিত ছোট্ট পাহাড়। আসলে এটি সাততলা ভবনের একটি কারখানা। আশ্চর্যের বিষয়, কারখানাটিতে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) বা ফ্যান নেই। তবুও তীব্র গরমে শীতল থাকে ভবনটি। সে জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে বিশেষ স্থাপত্য কৌশল। যার ফলে কারখানার ভেতরে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে। গাছপালায় ভরা নান্দনিক এ কারখানায় নিরাপদে কাজ করছেন শ্রমিকরা।

সাড়ে তিন একর জায়গার ওপর নির্মিত ভবনটি কারুপণ্য রংপুর লিমিটেডের শতরঞ্জির কারখানা। শহরের রবার্টসনগঞ্জে স্থাপিত এই ভবন বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে কয়েক ডিগ্রি শীতল থাকে। এতে ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবনটি জাতিসংঘ কর্তৃক টেকসই ও সবুজ ভবন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শতরঞ্জি তৈরির এ কারখানায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই নারী। নব্বইয়ের দশকে হাতেগোনা কয়েকজন পুরোনো কারিগরকে সংগঠিত করে নতুন করে শতরঞ্জি তৈরির কাজ শুরু হয়। শতরঞ্জি স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে।

কারখানার প্রধান ফটকের নাম রাখা হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে রংপুরের প্রথম শহীদ কিশোর শঙ্কু সমজদারের নামে। ফটক পেরিয়ে বৃক্ষরাজির মাঝখানে দেখা মেলে বনলতা সেনের বিশাল মূর্তি, যা নারী শ্রমিকদের মনোবল আর সাহস জোগায়। পুরো কারখানা চত্বরের পরিবেশ গ্রামের চিরচেনা আবহে তৈরি। মূল ফটক দিয়ে ঢুকে ভবনটি দেখে বিশাল সবুজের বাগান বললে ভুল হবে না। বহু জাতির গাছে ছেয়ে আছে ইট-পাথরের দালান। ভবনের ওপর থেকে দেয়ালজুড়ে ঝুলছে লতাপাতা। ভবনের সামনেও রয়েছে গাছগাছালি। দক্ষিণের বাতাস এসে সেসব গাছে দোল খায়।নিচতলায় লবিতে চারটি জলাধার। ১৫ হাজার বর্গফুট ব্যাসার্ধের এই জলাধারগুলো একসঙ্গে ধারণ করতে পারে পাঁচ লাখ লিটার পানি। আয়রনমুক্ত এই পানি কারখানায় শতরঞ্জি ডাইংয়ের কাজে ব্যবহার হয়ে জলাধারে আসে। গাছপালা আর এই পানির ওপর দিয়ে আসা বাতাস ৩৭ ফুট ব্যাসার্ধের চারটি চক্রাকার শূন্য স্তম্ভের মধ্য দিয়ে কারখানার ভেতরে ঢোকে। তারপর বিভিন্ন তলায় উঠে যায়। ফলে এসি বা ফ্যান ছাড়াই কারখানার বাইরের চেয়ে ভেতরের তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়।

কারখানার কর্মকর্তারা জানান, নব্বই দশকের শুরুর দিকে ভবনটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এটির কাজ শেষ হতে কয়েক বছর লাগে। শুধু স্থাপনার নির্মাণশৈলীই নয়, কারখানাকে সামাজিকভাবে টেকসই করার কথা ভেবে যোগ করা হয়েছে ক্যান্টিন, ডে কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সেন্টার, গ্রোসারি শপ, প্রেয়ার রুম, বিশ্রাম ও খাওয়ার জায়গা; যাতে শ্রমিকরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন। কারখানায় অপারেটর হিসেবে কর্মরত লিমা খাতুন বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করি। বাইরে যত গরমই হোক, কারখানায় শরীর ঘামে না।’ এই অনন্য স্থাপনার কারিগর স্থপতি বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার বলেন, ‘ভবনটি শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় গ্রামবাংলার লোকজ জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়েছে। গ্রামে ভিটেবাড়ির দক্ষিণ দিক খোলা থাকে এবং সেদিকে পুকুর থাকে। গরমে পুকুরের ওপর দিয়ে বাতাস শীতল হয়ে এসে বাড়িতে ঢুকে বেরিয়ে যায়। ফলে পুরো ভবন শীতল হয়ে আসে।’ প্রধান উদ্যোক্তা সফিকুল আলম সেলিম বলেন, ‘কারখানায় শ্রমিকদের কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। ফ্যান ঘুরলেও গুমোট ভাব কাটে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই ভবন শীতল রাখায় জোর দেওয়া হয়েছে।’

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ