বহু বছর ধরে ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছি : ইসরায়েলি সেনাপ্রধান
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
২১-০৬-২০২৫ ০৯:০০:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২১-০৬-২০২৫ ০৯:০২:১৩ অপরাহ্ন
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির। ছবি : সংগৃহীত
ইরানের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরেই সামরিক অভিযান প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইসরায়েল। ফলে এই অভিযান দ্রুত শেষ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির।
শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘এত বড় একটি হুমকি দূর করতে একটি দীর্ঘস্থায়ী অভিযান প্রয়োজন।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই অভিযানের প্রস্তুতি বহু বছর ধরে নেওয়া হয়েছে। ইরানের বিপুল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মজুদকে বিবেচনায় রেখেই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যদিও ইসরায়েল আশঙ্কা করেছিল, ইরান কয়েকশত ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়বে; বাস্তবে তারা ছুঁড়েছে প্রায় ১০০টি।
তিনি জানান, ইরান বহু বছর ধরে ইসরায়েল ধ্বংসের একটি সুপরিকল্পিত ছক তৈরি করে আসছিল। সম্প্রতি সেই পরিকল্পনা ‘অপারেশনাল সক্ষমতায়’ পৌঁছেছে।
জামির বলেন, ‘আমরা জানতাম, ইরানের হাতে প্রায় দুই হাজার ৫০০ ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তারা প্রতি বছর ব্যাপক আকারে এগুলো তৈরি করছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এ সংখ্যা ৮ হাজারে পৌঁছাতো।’
এ কারণেই ইসরায়েল পূর্বনির্ধারিতভাবে আগাম হামলা চালিয়েছে, বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জেনারেল জামির জানান, ‘আমরা একপ্রকার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা থেকে এই হামলা শুরু করেছি। দেরি করলে আমরা কৌশলগত সুবিধা হারাতাম। এখন আমাদের অভিযান সফল হয়েছে, তবে যুদ্ধ শেষ হয়নি।’
তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের সেনাকমান্ড ধ্বংস করেছে, পারমাণবিক কর্মসূচির বিভিন্ন অংশে বড় ধরনের ক্ষতি করেছে ও প্রায় অর্ধেক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকেই গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরানের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। দীর্ঘ ২০ মাস ধরে চলা এসব অভিযানের অংশ হিসেবেই ইরানে এই সরাসরি হামলা।
গত এক সপ্তাহে ইরান প্রায় ৪৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও এক হাজারের বেশি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের দিকে। এসব হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি হাসপাতাল ও একটি তেল শোধনাগারে আঘাত হানে।
তবে আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। তারা স্বীকার করেছে, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ‘প্রোটোকল অনুযায়ী’ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস না করে খোলা এলাকায় পড়তে দেওয়া হয় যাতে প্রকৃত ক্ষতি না হয়।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে দুই সপ্তাহ সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। শুরুতে ইসরায়েল মনে করেছিল, এই অভিযান এক সপ্তাহ বা দশ দিনের মধ্যে শেষ করা যাবে। তবে এখন ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার রহোভোতে ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটের সামনের এক বক্তব্যে বলেন, ‘ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, মানব অগ্রগতিকে ধ্বংস করতে চায়। তারা তাদের জনগণকেও ৫০ বছর ধরে নির্যাতন করে আসছে।’
তিনি জানান, গত সপ্তাহে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ওই ইনস্টিটিউটের দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা শুধু নিজেদের রক্ষা করছি না, বরং আরও অনেকের জীবন বাঁচাচ্ছি।’
তবে নেতানিয়াহুর অতীত মন্তব্য নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রল করছে। কারণ তিনি ২০০২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে দাবি করেছিলেন, ইরাক আক্রমণ করলে গোটা অঞ্চল স্থিতিশীল হবে। এখন তিনি আবারো বলছেন, প্রকৃত শত্রু ইরান।
এই মুহূর্তে ইসরায়েলের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। যদিও মার্কিন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত দ্রুত কমে আসছে, আইডিএফ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আইডিএফ প্রধান বলেন, ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আমরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছি ঠিকই, কিন্তু সামনে কঠিন দিন রয়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি নিশ্চিত, এই যুদ্ধ শেষ হবে ইসরায়েলের জয়ে।’
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স