ঢাকা , বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ , ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৩-০৫-২০২৫ ০৩:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-০৫-২০২৫ ০৩:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন
​গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ ফাইল ছবি
শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে আনারস চাষ। ভাল ফলন এবং স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে অন্যান্য কৃষকের মাঝে। চাষীরা জানায়, বন্য হাতির আক্রমণে ধানসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকেরা আনারস চাষে বাজিমাত করেছেন। তাই জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে শ্রীবরদি, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক আনারস চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। চাষীদের দাবী, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার একর অনাবাদি জমি আসবে আনারস চাষের আওতায়। গারো পাহাড়ে কৃষিতে উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। 

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সীমান্তঘেষা ঝিনাইগাতি উপজেলার বাঁকাকুড়াতে ৫০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক আনারস চাষ করেছিলেন জনসন ম্রং নামে এক আদিবাসী কৃষক। সে বছর তার চারা ক্রয়, বাগান পরিচর্যা, সেচ সার ও শ্রমিকসহ খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। আনারস বিক্রির পর খরচ বাদে তার লাভ হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। এদিকে লাভের অংক বেশি হওয়ায় ২০২৪ সালে তিনি একই উপজেলার গজনী অবকাশের পাশে ১০০ শতক জমিতে আনারসের চাষ করেন। এ বছর আনারস বিক্রির পর তিনি দেড় লাখ টাকারও বেশি মুনাফা পাবেন বলে আশাবাদী। এছাড়া শেরপুরের পাহাড়ী এলাকায় আনারস চাষের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ছড়িয়ে পড়লে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। নিজ চোঁখে দেখে এবং নিজ হাতে তুলে মিষ্টি আনারস খেয়ে অবাক হচ্ছেন অনেকে। ফিরে যাওয়ার সময় ব্যাগে করে আনারস নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের জন্য। 

আনারস দেখতে এবং খেতে আসা দর্শনার্থী নজরুল ইসলাম (৪০) জানান, আমি পাশের জেলা জামালপুরের ইসলামপুরে থাকি। এক বন্ধুর মাধ্যেমে জানতে পারি শেরপুরের পাহাড়ী এলাকায় মিষ্টি আনারসের চাষ হয়েছে। তাই দেখতে ও খেতে এসেছি। ইউটিউবার ফারহানা প্রেমা (৩৫) বলেন, এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য যে শেরপুরেও এত মিষ্টি আনারসের চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের সহযোগীতা করা হলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার একর অনাবাদি জমি আসবে আনারস চাষের আওতায়।

স্থানীয় কৃষক কুমেন্দ্র ম্রং (৪৫) জানান, পাহাড়ী এলাকা বুনো হাতির অত্যাচারে ধান, সবজি চাষ করা কঠিন। আনারস যেহেতু কাঁটাযুক্ত ফল। তাই পাহাড়ী জমিতে আনারস চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। কারণ হাতি কাঁটাকে ভয় পায়। কৃষক এনথনি মারাক (৪২) বলেন, সাইজ ছোট হলেও এই আনারস দারুণ মিষ্টি। গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে। আমরা দেখতে পারছি শেরপুরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুল পরিমান দর্শনার্থী আসছে। যারা খেত থেকে আনারস কিনে খেয়ে এবং পরিবারের সদস্যসদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। আমিও আগামীবছর ১ একর জমিতে আনারসের চাষ করব এবং আমরা আশাবাদী সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার চাষিরা আনারস চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

আনারস চাষী জনসং ম্রং (৫০) বলেন, ১৯৯৩ সালে তিনি টাঙ্গাইলের মধুপুরে ১ম বারের মত আনারস চাষের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে শেরপুর ফিরে পরীক্ষামূলক আনারস চাষ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে আনারস চাষে তার লাভের অংক অধিক। কোন কৃষক আনারস চাষে আগ্রহী হলে তাকে চারাসহ অন্যানো পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করবেন।ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ে আনারস চাষে সফলতা দেখে এখন নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতেও এই চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বন্য হাতির আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া গেলে  শেরপুরের পাহাড়ি অঞ্চলটি দেশের অন্যতম প্রধান আনারস উৎপাদন অঞ্চলে পরিচিতি পাবে।

এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদি, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর উপজেলার মাটি আনারস চাষে উপযোগী। উচ্চমূল্যের এই ফল চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতার কথা জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন

 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ