সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে মহাবিপন্ন বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম ফুটে জন্ম নিয়েছে ৬৫টি বাচ্চা। সোমবার (৫ মে) সকালে বাচ্চাগুলোকে তুলে কেন্দ্রের কচ্ছপ লালন-পালন কেন্দ্রর সংরক্ষণ প্যানে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।
তিনি বলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি কচ্ছপ ৮২টি ডিম দেয়। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে বালুর মধ্যে রাখা হয়। নিবিড় পরিচর্জার পর কেন্দ্রের পুকুর পাড়ের স্যান্ডবিচে রাখা সেই বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম থেকে সোমবার সকালে ফুটে বের হয় ৬৫টি বাচ্চা। এসব বাচ্চাদের প্যানে রেখে লালন-পালনের পর ছাড়া হবে বড় পুকুরে।
বাটাগুর বাসকা সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, বাটাগুর বাসকা বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ। ২০০০ সালের দিকেও বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করতেন, কচ্ছপের এই প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলাদেশে বরিশাল-নোয়াখালীতে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। তারপর থেকেই প্রাণীটির বিলুপ্তি ঠেকাতে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এবং সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ।তিনি বলেন, এই কচ্ছপটি মাংসাশী। এটি ছোট উদ্ভিদ, শামুক, ক্রাস্টেশিয়ান, ছোট মাছ ও কেওড়া গাছের ফল খেয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। তাদের আয়ু ২০০ থেকে ৩০০ বছর। কিন্তু বাটাগুর বাসকার গড় আয়ু ৪০ বছরের মতো। প্রতিটি বাটাগুরের ওজন ১৮ থেকে ২০ কেজি হয়ে থাকে। পৃথিবীতে শুধু বাংলাদেশেই ৪৫৮টির মতো বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে।
উল্লেখ্য, করমজলে ২০১৪ সালে মহাবিপন্ন প্রায় এ বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই ৮টি কচ্ছপ দিয়ে শুরু হয় এ প্রজনন কার্যক্রম। সেই থেকে এ পর্যন্ত করমজলে ৫২১টি ডিম দিয়ে এ কচ্ছপ। তা থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় ৪৭৫টি। বর্তমানে এ প্রজনন কেন্দ্রে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫৮টি কচ্ছপ রয়েছে। আর বংশ বিস্তারে বিভিন্ন সময়ে এ প্রজনন কেন্দ্র থেকে শতাধিক বাচ্চা সাগর ও সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন