যশোরে কালবৈশাখী ও আধাঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষেত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই ঝড়-বৃষ্টিতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। মাঠে কেটে রাখা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যে ক্ষেতের ধান কাটা হয়নি তার বেশিরভাগই ঝরে পড়েছে শিলার আঘাতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত দুই সপ্তাহের তীব্র ও মাঝারি তাপপ্রবাহের পর সোমবার বিকেল ৩টার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে। এরপর শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১৮০ কিলোমিটারের কালবৈশাখীর সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। একপর্যায়ে বৃষ্টি কমে এলেও প্রচুর পরিমাণে শিলা পড়তে থাকে। দীর্ঘসময় ধরে শিলাবৃষ্টি কারণে যশোরে বোরো মৌসুমে উঠতি ধানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সবেচেয়ে বেশি ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে চৌগাছা, সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলাতে। শেষ সময়ে ধানে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাজারও কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। তবে শিলাবৃষ্টিতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। চৌগাছার সিংহঝুলী মাঠপাড়াতে গ্রামের কৃষক টনিরাজ জানান, তার জমির খেতে ধানগাছ শুধু দাঁড়িয়ে আছে। শীষ থেকে সব ধান ঝরে মাটিতে পড়ে রয়েছে।
টনিরাজ বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম। ১৫ কাঠা কেটেছি। ২৫ কাঠা এখনো কাটা হয়নি। শিলাবৃষ্টির পর মাঠে গিয়ে দেখি একটি ধানও নেই।’ একই গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, এবার ১১ বিঘা ধান আবাদ করেছি। চার বিঘা কাটা হয়নি, দেড় বিঘা কেটে ক্ষেতেই রেখেছিলাম। সব ধান শেষ হয়ে গেছে। যেগুলো কাটা হয়নি সব ঝরে গেছে। এতে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, সিংহঝুলী, বলিদাপাড়া, ঝাউতলা, জামালতা, জগন্নাথপুর, কয়ারপাড়া মাঠের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার ২-৩ হাজার হেক্টর জমির বাসমতি ধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেতেই বাসমতি ও মিনিকেট ধান সব ঝরে গেছে। পৌর এলাকার পাঁচনামনা, ইছাপুর, তারিনিবাস, কংশারীপুর, স্বরূপদাহ, চৌগাছা সদর ইউনিয়নের লস্কারপুর, পিতম্বরপুর, মন্মথপুর মাঠের ধানেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু ধানেরই না; এসব মাঠের পটোল, কচুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, আম-লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, আকস্মিক শিলাবৃষ্টিতে যশোরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চৌগাছায়। মাঠে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, এবছর এক লাখ ৫৭ হজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫১ শতাংশ জমির ধান। কেটে রাখা ধানক্ষেত থেকে পানি বের করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটবে। দ্রুত পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন